দেশদ্রোহিতার চরম শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বাসিন্দারা। খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্তদের ১৯ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্থানীয়রা। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবরের বিস্ফোরণের আওয়াজ যেন এখনও তাঁদের কানে বাজছে। এখনও ভুলতে পারেন নি সেদিনের ঘটনা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইব্রাহিম বললেন, "আপাতত দুশ্চিন্তা কেটেছে। দোষীদের চরমতম শাস্তি চাই।"
জনবহুল এলাকায় ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ডেরা বেঁধে অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুজন জঙ্গির। পুলিশ-প্রশাসন ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে নি যে আপাত নিরীহ ওই বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছে জঙ্গিরা। ঘটনার পর আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে বেশ সময় লেগেছিল খাগড়াগড়ের বাসিন্দাদের। প্রথমে জেলা পুলিশের দাপাদাপি, তারপর সিআইডির আনাগোনা। সবশেষে এনআইএ তদন্তভার হাতে নেয়। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, সেদিন ওই বিস্ফোরণ না ঘটলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা ছিল দেশজুড়েই।
আজ ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, এনআইএ-র তদন্তকারীরা যে বাড়িটির গেট সিল করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তা এখনও একইরকম রয়েছে। বাড়ির দোতলায় ওপরে যাওয়ার সিঁড়ির গ্রিলের গেটও সিল করা রয়েছে। নীচতলার দোকানঘরও ওই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে কোনও ভাড়া দেওয়া হয় নি। একটা হোর্ডিং রয়েছে হোমিওপ্যাথি চেম্বারের। ওই বাড়ির মালিক নুরুল হাসান চোধুরী থাকেন বিস্ফোরণ ঘটা বাড়িটির ঠিক উল্টোদিকের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন তাঁর ছেলে। সংবাদমাধ্যম দেখে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনও কথাই বলবেন না।
আরও পড়ুন: খাগড়াগড় কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ১৯, সাজা ঘোষণার সম্ভাবনা শুক্রবার
খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিচারপর্বের শেষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ১৯ জন। তাদের সাজা ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা আগামীকাল, শুক্রবার। খাগড়াগড়ের বাসিন্দারা দোষীদের শাস্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, "২০১৪ সালে খাগড়াগড় কাণ্ড ঘটার পর থেকেই আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। চাইছিলাম, যারা এই দেশদ্রোহী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা যেন ধরা পড়ে। এবং তাদের চরম শাস্তি হয়। অবশেষে আদালত ১৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই খবর পেয়ে আমরা স্বস্তি পেলাম। দোষীদের চরম শাস্তি হবে এমনটা আশা করি।"
৫০টি ইস্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পাওয়া গিয়েছিল খাগড়াগড়ের বাড়িতে। মিলেছিল প্রচুর আইইডি তৈরির সরঞ্জামও। তাছাড়া একাধিক সিমকার্ড, মোবাইল ফোন ও হাতঘড়ি। একইসঙ্গে একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল ভুয়ো ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট। এছাড়া মিলেছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবানের ভিডিও সিডি ও প্রচারপত্র। বলা বাহুল্য, এভাবে আর খবরের শিরোনামে আসতে চান না ইব্রাহিম অথবা তাঁর প্রতিবেশীরা।