প্রথমে বাইকে জামাই বাবু। পরে ট্যাক্সিতে বাবা ব্যাগে করে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয়েছে নগদ দু-লাখের একটি বাইক এবং নগদ এক লাখ টাকা দিলেই ছেলেকে ছাড়া হবে। তাই মুক্তিপণ জোগাড় করেই বৃদ্ধ চলেছেন ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে।
ডানকুনি থেকে হাই রোড ধরে বোম্বে রোড। একবার এগোনোর পর আবার পিছিয়ে কখনও ডানে, কখনো বাঁয়ে। মোবাইলে ইন্সট্রাকশন আসছে, সেই মতো নির্দেশ মেনে চলেছেন বৃদ্ধ। আর তাঁর পিছনেই কিছুটা দূরে চারটি প্রাইভেট গাড়ি করে একদল পুলিশ নিয়ে গোপনে অনুসরণ করে চলেছেন ডানকুনি থানার আইসি তাপস সিনহা। একেবারে ফিল্মি কায়দায় অপহরণকারীদের পিছু নিয়ে মূল চক্রীকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। উদ্ধার করা হল অপহৃতকেও।
ঘটনাটি ঘটেছে ডানকুনিতে। অপহরণকারীদের পাণ্ডা রাহুল সামন্তকে মুম্বই রোডের কাছে ধরে ফেলে ডানকুনি থানার পুলিশ। রাহুলকে শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে তাঁর পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ডানকুনি এলাকার যুবক শেখ বাবাই অন্ধ্রপ্রদেশে সোনার কারিগরের কাজ করতেন। সেখানে তাঁই সহকর্মী ছিল ধৃত রাহুল। সম্প্রতি বাবাই বাড়িতে ছুটি কাটাতে ফেরে। খানাকুল এলাকার বাসিন্দা রাহুলও ফিরে ছিলেন। এর মধ্যে রাহুল শনিবার বাবাইকে তাঁর কাছে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। বাবাই হাওড়া পৌঁছে দেখে তাঁর জন্য রাহুল গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। গাড়িতে আরও কয়েকজন যুবক ছিল। গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষন পরেই সশস্ত্র অবস্থায় দুষ্কৃতীরা তাকে বেঁধে দেয়। এরপর নিয়ে যায় হাওড়ার কোনো অজানা স্থানে।
এরপরই বাবাইয়ের বাবাকে রাহুল ফোন করে জানায় ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেলেকে ফিরে পেতে হলে ১ লক্ষ টাকা নগদ এবং ছেলের বহুমূল্য টু হুইলারটি দিতে হবে। অপহরণকারীদের ফোন পেয়েই বাবাইয়ের বাবা ডানকুনি থানায় যোগাযোগ করেন। থানার আইসি সব শুনে তখনই অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে নেন। তৈরি হয় বাছাই করা কিছু অফিসারদের নিয়ে টিম। তাঁর নির্দেশ মতো বাবাইয়ের বাবা অপহরণ কারীদের জানান তিনি টাকা নিয়ে আসছেন ছেলেকে ছাড়াতে। কোথায় যেতে হবে লোকেশন চান। দুস্কৃতিরা তাঁকে উলুবেরিয়ার কাছে আসতে বলে। তিনি তাঁদের কথা মতো ট্যাক্সি নিয়ে রবিবার বের হন। বেশ কিছুটা দূরে ৪ টি ক্যাবে ১২ জন পুলিশকে নিয়ে তাপস সিনহা বাবাইয়ের বাবাকে অনুসরণ করতে থাকেন। অবশেষে পাখি জালে ধরা পড়ে। রাত প্রায় ৩টে নাগাদ দুস্কৃতিদের দেখা মেলে। তারাও একটি চারচাকা করে এসেছিল। টাকার ব্যাগ নেওয়ার পর বাবাই কে ছেড়ে দেয় তারা। বাইকটাও ছিনিয়ে নেয়। এরপর ই পুলিশ তাদের ঘিরে ফেললে চারচাকা করে বাকি দুস্কৃতিরা দ্রুত বেগে পালাতে সমর্থ হলেও বাইক সমেত মূল চক্রী রাহুল ধরা পড়ে যায়।