লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার মুখে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। প্রথমবার পুরোহিতদের জন্য ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। তবে সব পুরোহিতরা এই ভাতা পাচ্ছেন না। শ্মশানে পারলৌকিক কাজের সঙ্গে যেসব পুরোহিত যুক্ত, তাঁরাই ভাতা পাবেন। শুধুমাত্র কলকাতা পুরসভার অধীনস্থ ৭টি শ্মশানে নিযুক্ত পুরোহিতদেরই ভাতা দেওয়া হবে। পারলৌকিক কাজ পিছু পুরোহিতদের ৩৮০ টাকা করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার পরই ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য ভাতা চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ইমামরা যদি ভাতা পেতে পারেন, তবে পুরোহিতরা কেন পাবেন না? অবশেষে এবার পুরোহিতদেরও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে হিন্দুত্ব নিয়ে সোচ্চার হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সংখ্যালঘু তোষণ’ নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছে বিজেপি, সেই প্রেক্ষাপটে লোকসভার ফল ঘোষণার আগে পুরোহিত ভাতা চালুর সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: পর্যবেক্ষক মামলায় সুপ্রিম ধাক্কার মুখে রাজ্য
যদিও কলকাতা পুরসভার তরফে বলা হয়েছে, ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত লোকসভা নির্বাচনের আগেই নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আমরা এখন এটা বাস্তবায়ন করছি। ওই সমস্ত পুরোহিতদের রোজকার আয় নেই। মৃতদের পরিজনরা যেটুকু দেন, সেটাই সম্বল ওঁদের’’। পুরোহিত ভাতা প্রসঙ্গে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁদের সাহায্যের জন্য পারলৌকিক কাজ পিছু ৩৮০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪৯ জন পুরোহিতকে আমরা চিহ্নিত করেছি, যাঁরা ভাতা পেতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সমাজের সব স্তরের মানুষের পাশে রয়েছে’’।
কলকাতা পুরসভার এহেন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পুরোহিত সমাজ। সর্ব ভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল পণ্ডিত জয়ন্ত কুশারি বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি যে কলকাতা পুরসভা এমন উদ্যোগ নিয়েছে। আরও অনেক পুরোহিতরা এই সাহায্য পেলে ভাল হবে’’। হাওড়ার বগুয়া ভূদেব চতুষ্পতির শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দরিদ্র পুরোহিতদের আর্থিক সাহায্য প্রদান আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কলকাতা পুরসভার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এজন্য। আমরা সরকারের কাছে আর্জি রাখতে চাই, যাতে আরও অনেক পুরোহিতদের এই সাহায্য করা হয়’’।
অন্যদিকে, ভোট মেটার পর পুরোহিতদের ভাতা ঘোষণা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘কেন শুধুমাত্র শ্মশানের পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া হবে? কেন মন্দিরের পুরোহিতদের নয়? ওরা (শাসকদল) বুঝতে পেরে গিয়েছে যে, হিন্দু ভোট শেয়ার ওদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। সে কারণেই এসব উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব করে কিছু হবে না’’।
Read the full story in English