বন্ধের মুখে কলকাতা পুরসভা চালিত ১৮ টি স্কুল। প্রথম দফায় ১৮টি বিদ্যালয় বন্ধ করা হলেও দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ টি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে। কারণ হিসাবে কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে পড়ুয়ার সংখ্যা অত্যন্ত কম। পাশাপাশি স্কুল ভবনের বেহাল দশা। সবমিলিয়ে কলকাতা পুরসভার বহু স্কুলের বেআব্রু ছবি। পড়ুয়া না থাকাতেই মূলত বন্ধের মুখে কলকাতা পুরসভা মোট ২৮ টি স্কুল।
সেই স্কুলগুলিকে নিকটবর্তী স্কুলের সঙ্গে মার্জ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে। প্রথম ধাপে ১৮ টি স্কুলকে মার্জ করা হবে বলেই জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। একদিনে যেমন বেশ কিছু কলকাতা পুরসভা চালিত স্কুল গুলিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, পার্ক উদ্যান সহ লাইব্রেরি নানান ব্যবস্থা থাকছে সেই সকল স্কুলে পাশাপাশি এত সংখ্যক স্কুল একসঙ্গে বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থার জরাজীর্ণ দশাই উঠে আসছে বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
এই মূহুর্তে কলকাতা পুরসভার অধীনে মোট ২৪২ টি স্কুল থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা অত্যন্ত কম পাশাপাশি স্কুল ভবনের জীর্ণ দশার ছবিও ধরা পড়েছে। গত ৮ই মার্চ কলকাতা পুরসভার তরফে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে প্রথম পর্যায়ে ১৮টি স্কুলকে মার্জ করা হবে। পরের দফায় আরও ১০ টি স্কুলকে মার্জ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুরসভা সূত্রে খবর, স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, নথি, মিড-ডে মিলের সরঞ্জাম, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের আগামী ১৮ মার্চের মধ্যেই সেই সকল স্কুলে সরানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
কলকাতা পুরসভার অধীনে থাকা স্কুল গুলিতে এই মুহূর্তে ১৬ হাজার পড়ুয়া রয়েছে বলেই পুরসভা সূত্রে খবর। প্রথম পর্বে ১৮ টি স্কুল বন্ধ হলে কলকাতা পুরসভার অধীনে স্কুলের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ২২৪টি। কেএমসি শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকে মডেল স্কুল আপগ্রেড করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যেখানে থাকবে ই-লার্নিং সুবিধা। ইতিমধ্যে শহর জুড়ে দুটি মডেল স্কুল তৈরি করা হয়েছে শীঘ্রই আরও ১০টি স্কুল চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে কেএমসির মেয়র-ইন-কাউন্সিল (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেছেন, "মেয়র ফিরহাদ হাকিম সবসময় ই-লার্নিং সিস্টেমের জোর দেন। এই ধারণা অনুসরণ করে, মডেল স্কুল তৈরি করা হয়েছে। তাতে রয়েছে স্মার্ট ক্লাসরুম, পড়ুয়াদের জন্য থাকছে অডিও-ভিজ্যুয়াল মডিউল। তিনি বলেন, "আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল রিসোর্সের আরও ভাল ব্যবহার। এই স্কুলগুলিকে মার্জ করার করার ফলে, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকবেন যাদের আমরা প্রয়োজন ব্যবহার করতে পারব।"
তিনি আরও জানান, “এই সকল স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১০-এরও কম। সেখানে শিক্ষকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। স্কুল গুলি মূলত উত্তর কলকাতা জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কিছু কিছু কেএমসি স্কুল কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর রিপোর্ট করেছে। মূলত সেই স্কুলগুলিকেই মার্জ করা হবে সেই সকল স্কুলের সঙ্গে যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে”।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পড়ুয়ার অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ধুঁকছে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়। করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ ২ বছরের বেশি সময় ঘরবন্দী থাকাকালীন সময়ে স্কুলছূট পড়ুয়ার সংখ্যাও বেড়েছে আগেও তুলনায় অনেকটাই। অতিমারি পর্ব পেরিয়ে জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রাজ্যজুড়ে একের পর এক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংকট দেখা দেওয়ায় শিক্ষকসমাজের কপালে ভাঁজ পড়েছে। অভিজ্ঞমহল মনে করছে ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলের সঙ্গে পাল্লায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে সরকারি স্কুলগুলি। ঝাঁ চকচকে এসি ক্লাসরুমের পাশাপশি কর্পোরেট ধাঁচে শিক্ষার ধরণ অভিভাবকদের বেশি আকৃষ্ট করছে, এখন প্রশ্ন উঠেছে খাস কলকাতায় পুরসভা চালিত স্কুলের দৈন্যদশা শিক্ষা ক্ষেত্রে সংকটকে আরও প্রকোট করবে না তো?