KMC Poll 2021: কলকাতা পুরভোট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুর শোনা গিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের গলায়। রবিবার ভোট শেষে সাংবাদিক বৈঠকে কমিশন জানিয়েছে, বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া কলকাতা পুরভোট শান্তিপূর্ণ। শহরের মোট ১৬৫৬টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৮৯৫৯টি বুথ ছিল। বুথ দখলের কোনও অভিযোগ নেই। কমিশন সূত্রে খবর, বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৩%।
এদিন ভোট শেষে কলকাতা পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, শহরের দুটি এলাকায় বোমা জাতীয় দ্রব্য নিক্ষেপের খবর মিলেছে। কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি। এদিকে, মোটের উপর শান্তিপূর্ণ কলকাতা পুরসভা নির্বাচন। এমনটাই দাবি কলকাতা পুলিশের। পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ৬৩%। রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার। তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত শহরজুড়ে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বোমাবাজির ঘটনায় এক অভিযুক্ত রয়েছেন। মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট।‘ শিয়ালদহের এই ঘটনায় একজন জখমও হয়েছেন। রবিবার বিকেলে ভোট দিয়ে বেরিয়ে কলকাতা পুলিশের দাবিকে মান্যতা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন। বুথ থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘উৎসবের মেজাজে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। পুলিশ ভালো কাজ করেছে।‘
তবে এদিন সকাল থেকেই রিগিং, ছাপ্পা এবং কারচুপির অভিযোগে সরব ছিল বিরোধী দলগুলো। বিরোধী শিবিরের তরফে বড়বাজার, শিয়ালদহ, জোড়াসাঁকোর মতো এলাকা থেকে ভুরিভুরি অভিযোগ এসেছে। তবে বিরোধীদের অভিযোগ এদিন নস্যাৎ করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন, ‘কোনও অশান্তির সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
এদিকে, কলকাতা পুরভোটে ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম-সহ হিংসার অভিযোগ। বিরোধীদের নিশানায় শাসকদল তৃণমূল। সরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গোটা ঘাটনার পিছনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। ভোটে হিংসার প্রতিবাদে এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতর ও রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার কথা দুপুরেই জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। এরপরেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিশাল পুলিশবাহিনী সল্টলেকে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি ঘিরে ফেলে।
শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি ঘেরাওয়ের বিষয়টি নিয়ে টুইটে সোচ্চার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ”সল্টলেকে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি বিধাননগর পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ। সেখানে ২০ জন বিজেপি বিধায়ক-সহ দলের বেশ কয়েকজন রাজ্যস্তরের নেতাও উপস্থিত রয়েছেন।”
কলকাতা পুরনিগমের ১৬টি বোরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটের গণনা ২১ ডিসেম্বর। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে কলকাতা পুরনিগমের ভোট চেয়েছিল বিরোধিরা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি। ভোটে থাকছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। হাইকোর্ট ভোটের নিরাপত্তায় কলকাতা পুলিশের উপরই আস্থা রেখেছে। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
পরিসংখ্যানের বিচারে, ২০১৫ সালে বিজেপি কলকাতা পুরভোটে সাতটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিল। পদ্ম পাপড়ি মেলেছিল ৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০, ৮৬, এবং ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে। পরে ৭ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল গেরুয়াবাহিনী। কিন্তু, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে শক্তিক্ষয় হয় বিজেপির। মাত্র ১২টি আসনে এগিয়ে ছিল তারা। কিন্তু, ভবানীপুর উপনির্বাচনের পর আরও ২টি কমে ১০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গেরুয়া শিবির।
এই প্রেক্ষাপটে এবার ভোটে অ্যাডভানটেড তৃণমূল। আসন বৃদ্ধিই লড়াই রাজ্যের শাসক শিবিরের। অন্যদিকে ভোট বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ বিজেপির। অস্বিত্ব জানান দেওয়ার সুযোগ বাম-কংগ্রেসের সামনে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন