Advertisment

পুরনো খেলায় ফিরল কলকাতা: সৌরভ এবার কার দলে?

সৌরভ বিসিসিআই সভাপতিও ছিলেন।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Mamata Sourav Modi

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী।

তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলে ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন। বিসিসিআই সভাপতি হয়েছেন। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখেছে বাংলা। বন্ধুহীন সেসব পিচে সৌরভ দারুণ খেলেছেন। এবার তিনি খেলবেন কলকাতার রাজনৈতিক পিচে। বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে। এই পিচ তাঁকে তৈরি করে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেগাস্টার শাহরুখ খানের পরিবর্তে সৌরভ গাঙ্গুলিকে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মনোনীত করেছেন। এই ঘোষণা, টিএমসি সরকার গ্লোবাল বিজনেস সামিটে করল। বাংলায় বিনিয়োগ টানতে এই শীর্ষ শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকার। সম্মেলনের মাস দুই আগেই, বিদেশ সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল বাংলার ক্রিকেটের মহারাজকে। যা ছিল রীতিমতো বিরল, অকল্পনীয়।

Advertisment

একবছর আগেই সৌরভ গাঙ্গুলিকে সরিয়ে রজার বিনিকে সভাপতি করেছে বিসিসিআই। ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যত চলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে সচিব জয় শাহের ইঙ্গিতে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গাঙ্গুলিকে কেবল বিজেপি শিবিরেই নয়, দলের সম্ভাব্য মুখ, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও দেখা হচ্ছিল। বিজেপির উচ্চস্বরের সেই প্রচারে দাবি করা হয়েছিল, দলের বিরাট সম্ভাবনা আছে। যদিও গেরুয়া শিবির নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের কাছে হেরে যায়। সেই সময়ে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে গাঙ্গুলির ঘনিষ্ঠতায় গুজব বেড়ে গিয়েছিল। তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে বাড়িতে খাবার টেবিলেও দেখা গেছে।

যদিও কয়েকদিন পরে, গাঙ্গুলিকে রাজ্য সচিবালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেও দেখা গেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, বাংলা দুর্গাপূজার জন্য ইউনেস্কোর হেরিটেজ ট্যাগ পাওয়ার পরে এক ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে সৌরভ মঞ্চ ভাগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু, ২০২২ সালের অক্টোবরে গাঙ্গুলির বিসিসিআই সভাপতি পদে মেয়াদ সমাপ্তিই ছিল সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত যে সৌরভের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের ইতি হতে চলেছে। মঙ্গলবার বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে তাঁকে নিয়োগের পরে, বিজেপি নেতারা খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সবচেয়ে বড় ক্রীড়া তারকাকে বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করে কার্যত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিলেন। মঞ্চে উপবিষ্ট গাঙ্গুলিকে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সম্মেলনে বলেন, 'তিনি একজন খুব জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং তরুণ প্রজন্ম থেকে উঠে এসেছেন। আমি তাঁকে জানাতে চাই যে তিনি এখন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। আমি তাঁকে এটা মেনে নিতে অনুরোধ করব। আপনি না বলতে পারবেন না।'

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক এর আগে অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। সৌরভ বলেন, 'আমি সত্যি বলছি যে, যখনই আমি তাঁকে (মমতা) এসএমএস পাঠাই, আমি এক মিনিটের মধ্যে উত্তর পাই। কদাচিৎ বিলম্ব হয়। যখনই তিনি আমাকে টেলিভিশনে দেখেন, তিনি এসএমএস পাঠান, আমি কেমন আছি এবং আমি খেয়েছি কি না জানতে চান। আপনি আমাকে যে স্নেহ দেখিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ।' তাঁদের সম্পর্কে তিনি কী ভাবছেন তা জানতে চাইলে, বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ বুধবার বলেন, 'তিনি বাংলা এবং বাংলার ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অথচ, সৌরভ গাঙ্গুলিকে স্বীকৃতি দিতে বাংলা সরকার এবং টিএমসির এত সময় লেগেছে। ২০২৪ (লোকসভা নির্বাচন) মাথায় রেখে, তিনি (মমতা) এখন সৌরভের হাত ধরতে চান। তিনি (মমতা) তাঁকে (সৌরভ) ২০২৪-এর জন্য ব্যবহার করতে চান। শাহরুখ খানের বাজার কমে গেছে।'

দিলীপ ঘোষ জানান, বিজেপিকে দেখুন, সবসময় সৌরভ গাঙ্গুলিকে 'আইকন' হিসেবে স্বীকার করে এসেছে। বিজেপি নেতা বলেন, 'এর অনেক আগেই ত্রিপুরা (বিজেপি শাসিত রাজ্য) তাঁকে (সৌরভ গাঙ্গুলিকে) ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের সম্মান দিয়েছে। বিজেপি তাঁকে বিসিসিআই সভাপতি করেছে। বিজেপি তাঁকে ক্রিকেটে ব্যবহার করেছে, রাজনীতিতে নয়।' টিএমসি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'বিজেপির প্রতিক্রিয়া আবার দেখায় যে বাংলার উন্নয়ন, বাংলার সুবিধা সম্পর্কিত যে কোনও কিছু বিজেপিকে, বিশেষ করে বঙ্গীয় বিজেপিকে অসন্তুষ্ট করে। কেন্দ্রের অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে দরিদ্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন (তথাকথিত অনিয়মের কারণে কিছু প্রকল্পের অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিয়েছে)। বাংলার অহংকার সৌরভ গাঙ্গুলি। তাঁর মুখ শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। তাঁকে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হল। আর বিজেপি বলছে, এত দেরি কেন বা কেন সৌরভ। এটি বিজেপির মূল্যবোধের রাজনীতির অভাবকেই তুলে ধরেছে।'

গাঙ্গুলি সম্মেলনে মমতার স্নেহের কথা বলেছেন। তিনি কি তাঁর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক ভূমিকায় নামতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'এটা গাঙ্গুলিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না।' একজন প্রবীণ টিএমসি নেতা বলেন, 'সিপিআই(এম) প্রথমে তাঁকে দড়ি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেছিল। কয়েক বছর আগে, বিজেপি তাঁকে দড়ি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেছিল। এখন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করে একটি দুর্দান্ত পদক্ষেপ করেছেন। কী ঘটবে কে জানে? পুরোটাই নির্ভর করছে গাঙ্গুলির ওপর। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশের ব্যাপারে বিজেপির একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলেই জানি।'

আরও পড়ুন- ‘এই যেন গলা টিপে ধরবে’, শিল্পবান্ধব বার্তা দিতে কাকে নিশানা মমতার?

সেপ্টেম্বরে স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরের পর গাঙ্গুলি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন যে তাঁর কোনও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নেই। তিনি বলেছিলেন, 'আমি একজন ব্যক্তি। আমি কোনও এমএলএ, এমপি নই। আমার কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমি সারা বিশ্বে আমন্ত্রণ পাই- স্পেন, কলকাতা, দিল্লি। আমি কারও কাছে জবাবদিহি করি না। আমরা মানুষ এবং আমরা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি।' যাইহোক, গাঙ্গুলির বাংলার রাজনৈতিক বৃত্তের চারপাশে ঝুলে থাকায় গুজব প্রায় ১৭ বছর ধরে চলছে। তা খুব শীঘ্রই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এর আগে ২০০৬ সালে, যখন তিনি অবসর নেওয়ার পর জাতীয় দলে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, গাঙ্গুলি তখন বাংলার দীর্ঘদিনের শাসক দল সিপিএমের হয়ে প্রচারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

Politics Buddhadeb Bhattacharya dilip ghosh Suvendu Adhikari CPIM Sourav Ganguly amit shah bjp tmc Mamata Banerjee
Advertisment