নৃশংস হত্যাকাণ্ড! খোদ কলকাতা শহরের দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে খুনের অভিযোগ। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একটানা প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে মর্গেই পড়েছিল দুই কিশোরের দেহ। নিখোঁজ ডায়েরি হলেও পুলিশ দুই কিশোরকে উদ্ধারে কোনও তৎপরতা নেয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। এই ঘটনায় বাগুআইটি থানার পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সুর চড়া করছে রাজ্য বিজেপি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ অগাস্ট কলকাতার বাহগুইআটির জগৎপুর এলাকা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দুই ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়েই দুই স্কুল পড়ুয়া অতনু দে ও অভিজিৎ নষ্করকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাদের বাড়িতে জানায় অপহরণকারীরা। এমনকী ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যদের এসএমএস পাঠানো হয় বলেও জানা গিয়েছে।
মুক্তিপণ না মিললে দু'জনকে খুন করা হবে বলে হুমকিও দিয়েছিল অপহরণকরারী। এমন হুমকিতে দিশেহারা দশা হয়ে দুই পরিবারই ২৩ অগাস্ট বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করে। থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ শুরু থেকেই এই দুই ছাত্রের অপহরণ নিয়ে যথোপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ পরিবারের।
পরবর্তী সময়ে দুই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে পুলিশ সত্যেন্দ্র চৌধুীর নামে একজনের নাম পায়। পরে অপহরণকারীদের পাঠানো এসএমএস ট্র্যাক করেও এগোয় তদন্তের কাজ। শেষমেশ গতকালই দুই ছাত্রের নিখোঁজের পিছনে জড়িত থাকার সন্দেহে অভিজিৎ বোস নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জের করেই বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসে। পুলিশ সূত্রের দাবি, দফায়-দফায় জেরায় ভেঙে পড়ে অভিজিৎ। অতনু দে ও অভিষেক নষ্কর নামে ওই দুই ছাত্রকে খুনের কথা সে স্বীকার করে নেয়।
আরও পড়ুন- ‘কর্মীদের চিকিৎসা ভাতাও বন্ধ হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক’, মমতাকে তুলোধনা শুভেন্দুর
গত ২২ অগাস্ট গাড়ির মধ্যেই বাসন্তী হাইওয়ের উপর ওই দুই কিশোরকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশকে জানায় অভিজিৎ। তার সঙ্গে এই খুনে সত্যেন্দ্র চৌধুরী-সহ আরও কয়েকজন ছিল বলেও জেরায় জানায় অভিজিৎ। খুনের পর দেহ দুটি বাসন্তী হাইওয়ের ধারে একটি ক্যানালে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় অভিজিৎ।
এরপরেই তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ। শেষমেশ বসিরহাট মর্গে খোঁজ মেলে অপহৃত বাগুআইটির দুই কিশোর অতনু দে ও অভিজিৎ নষ্করের নিথর দেহের। পরিবারের সদস্যরা গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন। একটানা ১১ দিন ধরে বসিরহাট মর্গেই এই দুই চাত্রে মরদেহ পড়েছিল। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দুই পরিবার।
আরও পড়ুন- পুজোয় অনুদান মামলা: কোনও ডিএ বকেয়া নেই, হাইকোর্টে জানাল রাজ্য
তাঁদের অভিযোগ, ২২ অগাস্ট দুই কিশোর নিখোঁজ হয়ে গেলেও বাগুইআটি থানার পুলিশ ঘটনার কিনারা করতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবার। যদিও পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে। খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী-সহ আরও কয়েকজন অধরা রয়েছে।
এদিকে, বাগুইআটিতে এই জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য বিজেপি। এদিন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবিলম্বে বাগুআইটি থানার আইসিকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। এমনকী ঘটনার তদন্তে সিবিআই হস্তক্ষেপেরও দাবি করেছেন শমীক ভট্টাচার্য।