Advertisment

গুগল-ম্যাপকে টেক্কা দিয়ে পথের হদিশ বাতলে দেন টালিগঞ্জের 'পেপারওয়ালা'

শ্যামাপ্রসাদকে চেনেন? চেনেন না? তার মানে আপনি টালিগঞ্জের দিকের সব রাস্তা চেনেন। আর যদি তা না-চিনে থাকেন, তাহলে শ্যামাপ্রসাদকে চিনে আপনাকে নিতেই হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata bookseller google map

নিজের দোকানে শ্যামাপ্রসাদ দে

টালিগঞ্জের মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তা চিনতে পারছেন না? কোনও সমস্যা নেই। সামনেই বসে রয়েছেন মুশকিল-আসান, জীবন্ত গুগল ম্যাপস! রীতিমতো বোর্ড ঝুলিয়ে যিনি জানাচ্ছেন, এখানে ঠিকানা বলা হয়। গন্তব্যের হদিশ দিলেই তিনি পাখিপড়ার মতো করে বুঝিয়ে দেবেন কী করে যেতে হবে। তবে কানে মোবাইল বা ইয়ারফোন গুঁজে রাস্তা চিনতে চাইলে কিন্তু উত্তর মিলবে না। মুখে গুটখা থাকলেও নয়। দোকানের সামনে ঝোলানো বোর্ডে পথের হদিশ দেওয়ার জন্য এমনই সাত দফা পূর্বশর্ত রেখেছেন খবরের কাগজ, বই-খাতা বিক্রেতা বিজয়গড়ের বাসিন্দা শ্যামাপ্রসাদ দে।

Advertisment

বছর পঞ্চাশের শ্যামাপ্রসাদ ফুটপাথের স্টল চালাচ্ছেন গত ২৫ বছর যাবত। সিটি কলেজে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নেমে পড়েছিলেন ব্যবসায়ে। দোকানদারির হাত ধরেই চলেছে পথ চেনানোর কাজ। কিন্তু এমন বোর্ড ঝুলিয়ে কেন? তাঁর কথায়, "আমি আসলে এই এলাকার রাস্তাঘাটগুলোকে ভালবাসি। গলি-উপগলির মধ্যে হাঁটতে ভাল লাগে। টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে বাইরে থেকে অনেকেই আসেন, তাঁরাও যেমন আমার সাহায্য পেলে খুশি হন, আমারও তৃপ্তি হয় তাঁদের পাশে থাকতে পারলে। তাছাড়া আশেপাশে অনেক কলোনি, গলিঘুৃজি, ঠিকঠাক ঠিকানা বলতে পারবেন এমন লোক কমে যাচ্ছেন।"

আরও পড়ুন, এই ভোটে কি দিন বদলাবে রূপান্তরকামীদের?

কিন্তু ওই যে বললাম, শ্যামাপ্রসাদের সহযোগিতা পাওয়ার কিছু পূর্বশর্ত আছে। যাঁরা ঠিকানা জানতে চাইবেন, তাঁদের সেসব মাথায় রাখতে হবে। নাহলে শ্যামাপ্রসাদ মুখ খুলবেন না। বোর্ডে তিনি লিখেছেন:

১) ঠিকানা জানা থাকলে তবেই বলি।

২) বিশ্বাস থাকলে তবেই ঠিকানা জিজ্ঞাসা করবেন।

৩) ঠিকানা যখন আপনি জানতে চাইবেন, তখন আমি মন দিয়ে শুনব। তেমনই আমি যখন বলব, তখন আপনাকেও মন দিয়ে শুনতে হবে।

৪) ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার সময় কানে হেডফোন, ইয়ারফোন বা মোবাইল রাখা যাবে না।

৫) মুখে গুটখা নিয়ে ঠিকানা জানতে চাইবেন না। মুখ থেকে পিক ছেটার সম্ভাবনা থাকে।

৬) মন দিয়ে শুনে, তারপর পথ চলা শুরু করুন।

৭) দশজনের কাছে ঠিকানা জেনে বিভ্রান্ত হবেন না।

আরও পড়ুন,

শ্যামাপ্রসাদের কাজকর্মে মুগ্ধ অন্য ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের একজন, অমিত দাস, বলেন, "দাদা একদম অন্য জাতের মানুষ। এই এলাকাটাকে শুধু হাতের তালুর মতো চেনেন তাই নয়, বড্ড ভালবাসেন।" আর শ্যামাপ্রসাদের কথায়, "কলোনি এলাকায় হরেক গলি, তাদের চলনও নানা রকম। গুগল ম্যাপে সবসময় হদিশ পাওয়া মুশকিল। তবে আমি পাখিপড়া করে বুঝিয়ে দিতে পারি।"

kolkata news kolkata metro
Advertisment