Advertisment

ডেঙ্গুর ছোবলে ত্রস্ত বাংলা, লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বর্ষার শেষে শহর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Dengue in Kolkata

কলকাতা পুরসভার একাধিক বোরোতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

করোনা আবহের মধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। উৎসব আবহে করোনা গ্রাফ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। ফি বছর রাজ্যে বর্ষার শেষে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া-সহ বিভিন্ন পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শেষে শহর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা। কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের। কলকাতা পুরসভার একাধিক বোরোতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু কলকাতা নয়, একাধিক জেলাতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। উত্তর ২৪ পরগনা, বিধাননগরের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ডেঙ্গু মাথা চাড়া দিয়েছে। মালদা, কোচবিহারের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।

Advertisment

ডেঙ্গু রুখতে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না পুর-প্রশাসন। গত বারের তুলনায় এবার বেড়েছে ডেঙ্গু পরীক্ষার সংখ্যা। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ৮৪ হাজার জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে আক্রান্তের হার ছিল ২.৬%। এ বছর এক লক্ষ ৮৬ হাজার মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়েছে। এ বারে আক্রান্তের হার ১.৬%। শীতের মুখেও কমছে না সংক্রমণ, জেলায় জেলায় ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গু ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে চলেছে বাংলায়।

ডেঙ্গু মূলত একটি মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গুর প্রভাব হ্রাসে সরকারের সঙ্গে সাধারণকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের মতে, এই সময় ডেঙ্গু বাড়বে। নিময় অনুযায়ী বর্ষার শেষের দিকে এটা বাড়তে পারে, জমা জল থাকলে বাড়বে। নির্মাণ কাজ নিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আগে যে সমস্ত জায়গায় ম্যালেরিয়া পাওয়া যেত, সেখানে ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। ভয়াবহ আকার নেবে, বড় আকার নিতে পারে যদি সাধারণ মানুষজন সচেতন না হন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ২৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে বাংলায় ডেঙ্গুর কবলে পড়েন ৬৫০ জন। গত বছর এই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১৯। গত সপ্তাহ থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাতে উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬৩ জন। কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯২ জন। হাওড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২২। নদিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩২ জন। দার্জিলিংয়ে এই সংখ্যাটা ২৬। এরপরই রয়েছে মালদহের স্থান। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৭৩। উত্তর দিনাজপুরে ১৬। করোনা আবহে অলক্ষ্যে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে ডেঙ্গু।

পুজোর আগে থেকেই অজানা জ্বরে শিশু আক্রান্তের সংখ্যাটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় এই জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাটা হু হু করে বেড়েছে। কতটা নিরাপদ আপনার সন্তান? কী বলছেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার ইন্দ্রনীল চৌধুরী। তাঁর কথায়, “অনেকেই প্রচুর ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসছেন। গাঁটে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং গায়ে র‍্যাশ বেরোতে দেখা যায়। হাতের পিছনে গুটি দাগ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বর্ষাকালের শেষ থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই সময়, চিকিৎসকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের জ্বর নিয়ে রোগীর আসছেন। তার মধ্যে অনেকেই মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছেন”।

অপরদিকে চিকিৎসক সৌম্যজিৎ গুহ জানিয়েছেন, “ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ভয় পাবেন না। এখন জ্বর হলে, প্রথমে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। পরবর্তী সময় অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। আর প্লেটলেটের পরীক্ষা ভাল ল্যাব থেকে করতে হবে। না হলে ফলাফলে বিভ্রান্তি হতে পারে। তাঁর মতে, ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত চিহ্নিত হলে ওষুধ আছে। কিন্তু, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করেই, ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ করা হয়”।

ভয়ঙ্কর করোনা আবহের মধ্যেই দাপট দেখাচ্ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যান চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা। তাঁর কথায়, “কোনও রোগই সরকার ডেকে নিয়ে আসে না। কিন্তু সবক্ষেত্রেই তথ্য চাপা দেওয়ার একটা প্রবণতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। অবিলম্বে সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শহরের পাশাপাশি জালা এবং গ্রাম গুলিতেও প্রচুর ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। গ্রামগুলিতে ডেঙ্গু নিয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে কমাতে হবে। আক্রান্তের প্রকৃত তথ্য সামনে আনতে হবে। ফি বছর এই সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে তাই অবিলম্বেই বিভিন্ন পুরসভার তরফে ডেঙ্গু নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি”।

আরও পড়ুন শীতের পথে কাঁটা নিম্নচাপ, সপ্তাহ শেষেই চড়বে পারদ

অপরদিকে ডাক্তার পুণ্যব্রত গুঁইয়ের কথায়, ফি বছর ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগের লক্ষণ এই সময় অর্থাৎ বর্ষার শেষের দিকে দেখা যায়, এবারের রেকর্ড বৃষ্টি ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম একটি প্রধান কারণ। লোকেরা জ্বর হলেই ভেবে নিচ্ছেন করোনা হয়েছে। এই প্রবণতা থেকেও অনেক সময় ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে চলেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কিছু বোঝার আগেই করোনার জন্য যা যা করণীয় সেসব বিধি পালন করছে। পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকেই। ফলে ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কারণ, ডেঙ্গু ও করোনার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। সবশেষে তিনি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

ডেঙ্গুর এই সংখ্যাবৃদ্ধি ক্রমেই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনের। অভিযোগ উঠছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হতেই ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনে যাচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরাও। জমা জল থেকেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই বছর প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্যে ৯০০ ছাড়িয়েছে। রোজই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। একই সঙ্গে রাজ্যে বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬২ জন, মৃত্যু ৮ জনের। আবারও সংক্রণম শীর্ষে তিলোত্তমা কলকাতা। মহানগরীর পরেই দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Dengue Fever
Advertisment