ওমিক্রনের হাত ধরেই ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে। বার বার মিলেছে সাবধানবানী। সতর্কতা জারী করেছে কেন্দ্রও। তার পরেও উৎসবের মেজাজে বঙ্গে একশ্রেণীর মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। দুর্গাপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা থেকে শুরু করে প্রতিটি উৎসবের মরশুমেই শিথিল করা হয়েছিল রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ। আর তার ফল ভুগতে হয়েছে কয়েক দিনের মধ্যেই। বেড়েছে করোনা গ্রাফ।
বড়দিনের রাতের পার্কস্ট্রিটের ভিড় দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে সরকারকে কার্যত একহাত নিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একাংশ। এপ্রসঙ্গে চিকিৎসক মানস গুমটা জানিয়েছেন, 'দীর্ঘ প্রায় দুবছরে, করোনা যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করে ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীরা আজ ক্লান্ত। এর মাঝে যদি সত্যিই, আশঙ্কা সত্যি করে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে তার ফল হতে পারে মারাত্মক'। একই সঙ্গে তিনি উৎসব আবহে রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনাও করেন। তাঁর কথায়, 'যেখানে বিশ্বজুড়ে আবার করোনার নয়া প্রজাতি দাপট দেখাতে শুরু করেছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা সেখানে বড়দিন থেকে শুরু করে বর্ষবরণর রাতে মানুষের ঢল নিয়ন্ত্রণে রাশ টানা একান্ত ভাবেই প্রয়োজন' তা না হলে শুধু তৃতীয় কেন আরও কত ঢেউ আমাদের জন্য অপেক্ষা করা আছে তা আমরাও জানিনা’।
এদিকে বড়দিনের রাতের পার্ক স্ট্রিটে বিপুল মানুষের জমায়েতের ফল যে মারাত্মক হতে পারে সে ব্যাপারে মিলেছিল সাবধানবানী, আর তা সত্যি করেই ৪০০ থেকে ৫০০’র ঘরে ঘোরাফেরা করোনা গ্রাফ এক লাফে বেড়েছে অনেকটাই। গত ৪৮ ঘণ্টায় ব্যাপক ভাবে বেড়েছে করোনার দৈনিক সংক্রমণ-মৃত্যু। সোমবার রাজ্যে সংক্রমিত ছিল সাড়ে ৪০০-র নীচে। বুধবার সেই সংখ্যা হাজার ছাড়াল। একদিনে বাংলায় সংক্রমিত ১০৮৯, মৃত ১২। আর এই পরিসংখ্যানই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। বঙ্গে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ১১।
বিশেষজ্ঞদের মতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা আগামী কয়েকদিনেই বাড়তে পারে হু হু করে। কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়েছে এর সংক্রমণ ক্ষমতাকে। করোনার ডেল্টা প্রজাতির থেকেও প্রায় ৫ গুন বেশি সংক্রামক ওমিক্রন প্রজাতি। সেই সঙ্গে স্বল্প উপসর্গ চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। এপ্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানান, ‘যেহেতু এই সময়টায় বেশিরভাগ মানুষজন কমবেশি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাই অনেকেই সাধারণ সর্দি জ্বরকে সেভাবে পাত্তা দিচ্ছেন না, মানুষের সঙ্গে মিশছেন, দোকান বাজার সবই করছেন এতেই বাড়ছে বিপদ। নিজের অজান্তেই ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে হুহু করে’। এর সঙ্গে টেস্টের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, ঠিক মত টেস্ট হলে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাটা অন্তত দ্বিগুণ হত।
এর আগে বিধিনিষেধের ছাড়ের ফল কী হয়েছিল তা আমাদের সকলেরই জানা। তা সত্ত্বেও কেন বর্ষবরণের রাতে নাইট কারফিউ সহ অন্যান্য বিধিনিষেধ জারী থাকছে না প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, যখন দেখা যাচ্ছে উৎসবের নামে একশ্রেনীর মানুষ সকল প্রকার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে জীবন মরণ খেলায় মেতেছেন তখন সরকারের উচিত তা কড়া হাতে তা দমন করা। না হলে যে ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে সরকারকেই।
করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে এত মৃত্যু দেখার পরও সমাজের একশ্রেনীর মানুষের এমন বেপোরোয়া মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন চিকিৎসক থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের বেলাগাম ভিড় নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে পরিস্থিতি মুহূর্তেই হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলেন মনে করছেন তাঁরা। আর এই ব্যাপারে তাঁরা সরকারের ঢিলেঢালা মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা না করেই এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন