কলকাতার রাস্তায় হাঁটার সময় বিনা নোটিশে আচমকা কেঁপে উঠতে পারে পায়ের তলার মাটি। বিস্ফোরণে ছিটকে যেতে পারে ম্যানহোলের ঢাকনা। চিড় ধরতে পারে রাস্তায়। যাত্রীবোঝাই বাস বা অন্য গাড়ি বিস্ফোরণের আওতায় থাকলে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এমনকি, এক বা একাধিক প্রাণহানি হওয়াও অসম্ভব নয়।
বোমা নয়, গ্রেনেড নয়. আরডিএক্সের মতো শক্তিশালী কোনও মারণাস্ত্রও নয়। এর জন্য দায়ী প্রকৃতির রোষ এবং পুরসভার "অপদার্থতা"। সেই সঙ্গে অবশ্যই আমজনতার সচেতনতার অভাব। এই সবকিছুর মিশেলে যে কোনও সময়ই ঘটতে পারে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ট্যাংরার বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে এমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কলকাতা পুরসভাও সেই আশঙ্কার শরিক।
গত বৃহস্পতিবার ভরদুপুরের ঘটনা। ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডের একাংশ আচমকাই কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণের শব্দে। প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা ফেটে গিয়েছিল তার অভিঘাতে। কয়েকজন অল্পবিস্তর আহত হলেও বড় দুর্ঘটনা হয় নি। কারণ ওই সময় রাস্তা কার্যত শুনশান ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই নিষ্কৃতি কেবলই 'ঘটনাচক্রে'। কারণ কলকাতার ব্যস্ত রাস্তাগুলিতেও যে কোনও সময় এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। অন্তত, দুর্ঘটনার যাবতীয় অনুঘটক প্রস্তুত রয়েছে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।
কেন হয়েছিল ট্যাংরার বিস্ফোরণ? পুরসভা সূত্রের খবর, ওই এলাকায় একটি ব্রিটিশ আমলের ম্যানহোল রয়েছে। সেটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। বছরের পর বছর ওই ম্যানহোলের নীচে জঞ্জাল এবং জল জমার ফলে বিপুল পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার ওই গ্যাস সশব্দে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাটি ফাটিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তায় পরপর ছয়টি বিস্ফোরণ হয়েছিল। স্থানীয় কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। ওই আধিকারিকের কথায়, "ওই রাস্তায় বাস চলে। যদি যাত্রীবোঝাই কোনও বাসের নীচে আচমকা বিস্ফোরণ হতো! ভাবলেই শিউরে উঠছি।"
ট্যাংরা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের যে কোনও জায়গাতেই এমন হতে পারে। এবং অনেক বেশি তীব্রতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের বিভাগীয় প্রধান চিত্তরঞ্জন সিনহার কথায়, "সমস্যা মূলত দু'টি জায়গায়। প্রথমত, দীর্ঘদিন ম্যানহোল পরিষ্কার করা হয় না। ফলে মিথেন বা অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস বিপুল পরিমাণে জমতে থাকে। যে কোনও সময় ওই গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত, ম্যানহোলগুলিতে একাধিক ছিদ্র থাকে। সেগুলি দিয়ে গ্যাস ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। বিস্ফোরণের আশংকা কমে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতে কখনও রাস্তা তৈরির সময় বা অন্য কোনও কারণে ওই ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্যাস ভূগর্ভেই জমতে থাকে। এই বিষয়টি সম্পর্কেও সচেতন থাকা প্রয়োজন।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, "ট্যাংরায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অল্প হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্যত্র এর পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল প্রাণহানিও হতে পারে। পুরসভার উচিত তৎপর হওয়া।"
পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) তারক সিং জানান, সোমবারই তাঁরা এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। প্রাথমিক ভাবে পুরসভার লক্ষ্য শহরের কোনও ম্যানহোলের ছিদ্র যাতে বন্ধ না হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করা। তাঁর কথায়, "শহরের লক্ষাধিক ম্যানহোল রয়েছে। অনেকগুলিই ব্রিটিশ আমলে তৈরি। সমস্যা রয়েছে। তবে আমরাও চেষ্টা করছি।"