Advertisment

নতুন বিভাগ চালুতেই কি মিটবে সমস্যা? রোগীর চাপ সামলাতে পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর আর্জি!

স্বাছন্দ্য বজায়ে নতুন ইউনিটে মিটবে না সমস্যা দাবি রোগীদের। অনেকক্ষেত্রেই হয়রানির অভিযোগ।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
medical college, kolkata, bangla news

তিনটি বিভাগ চালু করলেই কী মিটবে সমস্যা উঠেছে প্রশ্ন।

বাড়ছে রোগীর চাপ, স্বাছন্দ্য বজায়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চালু হতে চলেছে তিনটি নতুন বিভাগ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর নিওনেটোলজি বা সদ্যোজাত শিশু বিভাগ, কার্ডিয়াক আনেসথেসিওলজি এবং রিউম্যাটোলজি বিভাগ এই তিনটি নতুন বিভাগ চালু করার পথে শতাব্দি প্রাচীন এই হাসপাতাল। তিনটি নতুন বিভাগ চালুর আবেদন জানিয়ে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নতুন তিনটি বিভাগ চালু করলেই কী মিটবে সমস্যা উঠেছে প্রশ্ন!

Advertisment

করোনা পরবর্তী কালে মেডিক্যালে রোগীর চাপ বেড়েছে আগের থেকেও বেশি। পরিষেবা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রোগীদের একাংশের। সকাল থেকে আউটডোরের টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। মেডিক্যালে চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা বেশিরভাগই আসেন দুরদুরান্ত থেকে। দীর্ঘক্ষণ লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন আমডাঙ্গার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস। ছেলে কিডনির সমস্যায় ভুগছে দীর্ঘ এক বছর ধরে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ছেলের চিকিৎসা করাতে আমডাঙ্গা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছেন। কলকাতার ঐতিহ্যপ্রাচীন হাসপাতালে এসেছেন তখন সকাল ৮'টা। সে'ই থেকে ঠায় ছোট ছেলেকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি। এদিকে রোদে-গরমে নাজেহাল অবস্থা তারই মত একাধিক জেলা থেকে আসা রোগীদের। ছোট ছেলেটি'ও গরমে বেজায় কাহিল। সুস্থ হতে অবাক চোখে লাইনের সামনে উঁকি দেওয়ার 'বৃথা চেষ্টা'!

রোগীর চাপ সামাল দিতে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের 'গাফিলতির' বিরুদ্ধে কেউ কেউ সংবাদ মাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিলেন। অনেকেরই অভিযোগ, "সিটি স্ক্যান অথবা 'আলট্রাসোনোগ্রাফি' করতে অপেক্ষা করতে হয় দু'থেকে আড়াই মাস। এমনকী রিপোর্ট পেতেও অপেক্ষা করতে হয় প্রায় সাত থেকে দশদিন। ফলে রোগের চিকিৎসা শুরু করতেই অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে"। একই সঙ্গে হাসপাতালে সক্রিয় দালাল চক্রের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন চিকিৎসা করতে আসা রোগীদের একাংশের। তাদের কথায়, "অনেক ক্ষেত্রেই 'ক্রিটিক্যাল কেসে' সিসিইউ, আইসিইউ বেড পাওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে বেড পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা চাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন রোগীর আত্মীয়'রা। তাদের আরও অভিযোগ, 'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মদতেই দালাল চক্রের রমরমা"।

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ লেগেই থাকে নিত্যদিন। অপারেশনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার অভিযোগও করেন জেলা থেকে হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অনেক রোগী। মুর্শিদাবাদ থেকে আগত শেখ ইনতাজ নামের এক রোগীর অভিযোগ, "আগে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে তিন দিন চিকিৎসক বসতেন। এখন সেখানে সোম এবং শুক্রবার আউটডোরে চিকিৎসক বসছেন। তাও অনেক ক্ষেত্রে শুক্রবারের বদলে বেশিরভাগ রোগীকে সোমবারই আসতে বলা হয় ফলে এখানে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়"।

এর পাশাপাশি রোগীর আত্মীয়দের দাবি, "অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ বাইরে থেকে অথবা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কিনতে হয়। 'প্রেসক্রাইব' করা ওষুধের বেশিরভাগই হাসপাতালে অমিল"। পাশাপাশি হাসপাতালের একাংশ নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালকের 'আঁতাতের'ও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন: < দশমীতেই শহরে গাঁটছড়া কানাডিয়ান গবেষক দম্পতির! দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন ‘রূপান্তরকামী’রা >

মেডিক্যালে সোনারপুর থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় সঞ্জনা দাসের অভিযোগ, "রোগীকে নিয়ে মূল গেটের দিকে যেতেই হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে এসে নিজেই জানতে চান কোথায় বাড়ি! এর পর উনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ফোনও করেন এক অ্যাম্বুলেন্স চালককে। তিনি এসেই প্রথমে মেডিক্যাল থেকে সোনারপুরে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২৫০০ টাকা চেয়ে বসেন। দরাদরি করতে তা নেমে ২০০০ এ নামে। এই টুকু রাস্তা যেতেই গুনতে হয় বিপূল পরিমাণে ভাড়া"। সঞ্জনা দেবীর কথায়, " আমার মত রোজই অজস্র রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে চলেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তার অভিযোগ হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মীকে 'কমিশন' দিতেই বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে আমাদের মত সাধারণ রোগীদের"।

এদিকে নতুন তিনটি বিভাগ নিয়ে হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক নিওনেটোলজি বিভাগ রয়েছে। ৫০ শয্যা নিয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এই বিভাগকে, নতুন এই বিভাগ নিওনেটোলজি বা 'সদ্যোজাত শিশু বিভাগ' নামেই পরিচিত। এর পাশাপাশি, আরেকটি বিভাগ হল কার্ডিয়াক আনেসথেসিওলজি। ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু যেভাবে হার্ট এবং থোরাসিক অস্ত্রোপচার বাড়ছে। তাতে এই বিভাগ চালু করার বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল চিকিৎসক রঘুনাথ মিশ্র বলেন "এই বিভাগটির অধীনে ২০টি সিসিইউ চালু করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে হাসপাতালের"।

রিউম্যাটোলজি বিভাগ, বর্তমানে শুধু এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। বাতজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় মেডিক্যাল কলেজেও এই বিভাগ চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন এই বিভাগ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হতে চলেছে নতুন এই ইউনিট। তবে নতুন বিভাগ চালুর পাশাপাশি রোগীর চাপ মোকাবিলায় বিকল্প চিন্তা-ভাবনার পক্ষে সওয়াল তুলেছেন মেডিক্যালে চিকিৎসায় আসা রোগীদের একটা বড় অংশের।

calcutta medical college kolkata
Advertisment