নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের প্রতিবাদে এবং ডাক্তারদের নিরাপত্তা-সহ ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন প্রাথমিকভাবে কড়া প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবিলম্বে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ না দিলে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেন মমতা। এছাড়া, ডাক্তারদের 'ধর্ম দেখে' চিকিৎসা করা অনুচিত বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। জুনিয়ার ডাক্তারদের উপর আক্রমণ এবং মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে এরপরই রাজ্য জুড়ে গণইস্তফা দিতে শুরু করেন সিনিয়র ডাক্তাররা।
উত্তর ২৪ পরগনার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ থেকে প্রথম শুরু হয় গণইস্তফা। এরপর দ্রুত রাজ্যের একের পর এক হাসপাতাল থেকে আসতে শুরু করে সিনিয়র ডাক্তারদের গণইস্তফার খবর। দিন দুয়েক ধরে চলতে থাকে এই গণইস্তফার দমকা হাওয়া। সব শেষে দেখা যায়, এনআরএসকাণ্ডে ইস্তফাদানকারী সিনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যাটা কমপক্ষে ৭০০-র কাছাকাছি। তবে এই গণইস্তফা নিয়ে গোড়া থেকেই নীরব থেকেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তবে এই খবরে রীতিমতো বিচলিত হয়ে পড়েছিল রাজ্যবাসী। অনেকের মনেই প্রশ্ন, একেই ডাক্তার কম, তাহলে কি রাজ্য আরও ৭০০ ডাক্তার হারাবে? কী অবস্থা এই পদত্যাগীদের?
আরও পড়ুন- এবার থেকে কেমন হবে হাসপাতালের নিরাপত্তা?
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার কথায়, এইসব গণইস্তফা নিতান্তই প্রতীকী। তাই এই পদত্যাগপত্র নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও আলোচনাই হয়নি। ইতিমধ্যে 'ইস্তফা দেওয়া' ডাক্তাররা নিজ কর্মস্থলে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। তবে মুচকি হেসে ওই অধিকর্তা জানিয়েছেন, একেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্কট, তারওপর এই সব চিকিৎসকরা হাসপাতাল ছেড়ে গেলে সত্য়িই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে। ফলে পদত্যাগপত্র মঞ্জুর করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু, ডাক্তাররা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিতে চাইলে সরকার কি তা গ্রহণ না করতে পারে? এ ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা কী?
আরও পড়ুন- ‘মেলানো যায় না, আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে এনআরএসে’
রাজ্যের 'হেলথ সার্ভিস রুল' অনুযায়ী, চাকরি ছাড়তে গেলে কতগুলো নিয়ম মেনে পদত্যাগপত্র পাঠাতে হয়। প্রথমত 'প্রপার চ্যানেলে' এই পদত্যাগপত্র পাঠানো খুব জরুরি। কোনও অবস্থাতেই দলগতভাবে প্রেরণ করা পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় না। অর্থাৎ যে কোনও পদত্যাগপত্রই পাঠাতে হবে ব্যক্তিগতভাবে। এছাড়া তিন মাসের 'নোটিশ পিরিয়ড'ও রয়েছে। ফলে, আজ চাকরি ছেড়ে দেবো বলে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নোটিশ না দিলে তিন মাসের বেতন সরকারকে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে।
আরও পড়ুন- মমতা-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক ইতিবাচক, একনজরে এনআরএসকাণ্ড
জানা যাচ্ছে, এনআরএসকাণ্ডে জমা পড়া গণইস্তফাপত্রগুলি সংশ্লিষ্ট প্রিন্সিপালদের দফতরেই থেকে গিয়েছে। 'প্রত্যাশিতভাবেই' সেগুলি গ্রহণ করার প্রশ্ন উঠছে না। তবে, ডাক্তারদের এহেন পদক্ষেপকে প্রতীকী প্রতিবাদ এবং সংহতি জ্ঞাপক বার্তা হিসাবে প্রশংসা করেছে সমাজের একাংশ।