Advertisment

মমতা-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক ইতিবাচক, একনজরে এনআরএস কাণ্ড

বৈঠকের শেষে সমস্ত দাবি মেনে নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক গোটা এক সপ্তাহের আন্দোলনের ওপর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক সপ্তাহ পর মিলল এনআরএস কাণ্ডে জট কাটার ইঙ্গিত। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠক যে আশাব্যঞ্জক, তা বলা বাহুল্য। যেখানে জুনিয়ার ডাক্তারদের তরফে একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে নিরাপত্তার আবেদন। তারপর উঠে আসে এক এক করে ১২ দফার দাবি, যেখানে জুনিয়র চিকিৎসকদের এদিন সব ব্যাপারেই বরাভয় দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকের শেষে সমস্ত দাবি মেনে নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রেক্ষিতে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক গোটা এক সপ্তাহের আন্দোলনের ওপর।

Advertisment

সোমবার (১০ জুন): ঘটনার সূত্রপাত, সোমবার। গত ১০ জুন রাতে এনআরএসে মৃত্যু হয় ৭৪ বছর বয়সী মহম্মদ সঈদের। চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হন নিহতের পরিজনরা। খবরে প্রকাশ, দুটি ট্রাকে করে বাইরে থেকে লোক এনে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। মারধরে গুরুতর জখম হয়ে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়। জখম হন আরেক জুনিয়র ডাক্তার যশ টেকওয়ানি।

মঙ্গলবার (১১ জুন): এনআরএস হাসপাতালে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বেলা গড়ালে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতাল। এনআরএসে গেলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান ডাক্তাররা। ‘ডক্টরস ফোরাম’-এর নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন করে মঙ্গলবার বিকেলে জানানো হয়, ১২ জুন রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে। তবে এমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, এনআরএসে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। ধৃতরা সকলেই মৃত রোগীর পরিজন বলে জানা গিয়েছে। তবে ধৃতদের কারোরই নাম প্রকাশ্যে আনে নি পুলিশ।

বুধবার (১২ জুন): রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করা হয়। বন্ধ থাকে আউটডোর। এমনকি, এনআরএস, এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যালে জরুরি পরিষেবাও থমকে যায়। যার জেরে চরম হয়রানির মুখে পড়েন রোগীরা। বেলা গড়াতে নীলরতন সরকার হাসপাতালে আসেন অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডাঃ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আন্দোলনরত জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কার্যত থমকে যায় চিকিৎসা পরিষেবা। এর জেরে চরম ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা। কলকাতায় দফায় দফায় বিক্ষোভে শামিল হন রোগীদের একাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন): জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে কার্যত ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এদিনও এনআরএস-সহ বেশ কিছু হাসপাতালে কর্মবিরতি চলে। হঠাৎই এসএসকেএমে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাক্তারদের চার ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করার নির্দেশ দেন। তা না হলে এসমা (এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেন্টেনেন্স অ্যাক্ট)-র আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মমতা। এমনকী নির্দেশ না মানলে হস্টেল খালি করার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ওই হুঁশিয়ারির পরই আন্দোলন জটিলতর হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে এদিন কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ইস্তফা দেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিনিয়র ডাক্তারদের খোলা চিঠি পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে জরুরি বৈঠকও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ইস্তফা দেন এনআরএসের অধ্যক্ষ ও সুপার।

শুক্রবার (১৪ জুন): এনআরএসে সকালে খোলে জরুরি বিভাগ। কিন্তু সেই অর্থে জরুরি পরিষেবা চালু হয় নি। এদিন দেশজুড়ে বিক্ষোভে শামিল হন চিকিৎসকরা। কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন আইএমএ-র সদস্যরা। কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন দিল্লির এইমস কর্তৃপক্ষ। এদিন কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক গণ ইস্তফা দেন। ইস্তফা দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দুই চিকিৎসক। শুক্রবার এনআরএসে যান অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনরা। মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএসে আসার আর্জি জানান অপর্ণা।

এদিকে নবান্নে সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পরই জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠান মমতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই ডাক ফিরিয়ে দেন ডাক্তাররা। বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে এনআরএসে যান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। রাতে আহত ডাঃ পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। মমতাকে হস্তক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।

শনিবার (১৫ জুন): মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তাররা। এনআরএসের ঘটনায় রাজ্যকে ফের অ্যাডভাইজরি পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এদিকে, এদিনও এনআরএসে বন্ধ থাকে আউটডোর। ইস্তফা দেন কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের ৩৪ জন ডাক্তার।

রবিবার (১৬ জুন): সমাধানের চেষ্টায় এনআরএসে হাজির হন ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন প্রদীপ মিত্র। দীর্ঘ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজি তাঁরা। কিন্তু বৈঠক সংবাদমাধ্যমে 'লাইভ টেলিকাস্ট' করতে হবে। কোথায় বৈঠক হবে তার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে বলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রবিবার রাতেই জানতে পারা যায়, সোমবার দুপুর তিনটের সময় বৈঠক করা হবে নবান্নে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন ১৪ টি মেডিক্যাল কলেজের দুজন করে প্রতিনিধি।

সোমবার (১৭ জুন): নবান্ন থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে আমন্ত্রণের বিবৃতি এসে পৌঁছলে তাঁরা প্রদীপ মিত্রের উপস্থিতিতে বৈঠক করেন এবং জানান, সংবাদমাধ্যমের লাইভ টেলিকাস্ট ছাড়া বৈঠক করবেন না। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি মেনে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে বৈঠক করেন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী-জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ঘন্টা দেড়েকের বৈঠকে শেষমেশ উঠে আসে সমাধান সূত্র।

Mamata Banerjee
Advertisment