বাড়ছে উদ্বেগ। ওমিক্রন আতঙ্কে নাজেহাল বিশ্ব। একের পর এক দেশে মারণ থাবা বসাচ্ছে করোনা ভাইরাসের নয়া এই প্রজাতি। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে মিলেছে সাবধানবাণী, ওমিক্রনের হাত ধরেই কি আসতে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ? আশঙ্কায় রয়েছেন তাবড় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ভারতের একাধিক রাজ্যেও হানা দিয়েছে ওমিক্রন। বাংলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫। রোজই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪ জনের চিকিৎসা চলছে শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে। অপর এক মেডিক্যাল পড়ুয়া ভর্তি রয়েছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ওমিক্রন ত্রাসের মাঝেও বড়দিনের কলকাতার লাগামছাড়া ভিড় বাড়িয়েছে রক্তচাপ।
লাগামছাড়া এই ভিড় ওমিক্রনকে ডেকে আনবে না তো প্রশ্নটা এখন ঘোরাফেরা করছে সকলের মনে। এর আগে দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো সহ একাধিক উৎসবের মরশুমে লাগামছাড়া ভিড়ের পরেই বেড়েছে করোনা গ্রাফ। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও কয়েকগুণ সংক্রামক এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। আর তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে। কলকাতার পুরভোট, আর তার পর বড়দিন বিপুল জমায়েত কি খাল কেটে কুমির আনতে চাইছে? ডেল্টা ভ্যারিয়েণ্টের থেকেও প্রায় তিন গুণ বেশি সংক্রামক এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। আর এই প্রজাতির উপসর্গ প্রথম পর্যায়ে মৃদু আর তাতেই ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে শহরের তাবড় চিকিৎসকদের। কেন?
বর্ষবরণের রাতে যেভাবে মানুষের ঢল নামে শহর কলকাতায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেই বিপদ। মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফল হতে পারে মারাত্মক। তা এক কথায় মেনে নিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। তাঁদের কথায়, শীতের মরসুমে জ্বর ঠান্ডা লাগা, সর্দি গরম খুব স্বাভাবিক ঘটনা আর ভয়টা ঠিক সেখানেই, ওমিক্রনের উপসর্গ ঠিক এরকম মৃদু। আর তাই মাস্ক ছাড়া, কোভিড প্রোটোকল না মেনে ভিড়ের মধ্যে মিশে আনন্দের ফল হতে পারে ভয়ানক।
ইতিমধ্যেই ওমিক্রন পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠক সেরে নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতর। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবার যে চিত্র ধরা পড়েছে তা যেন আর কোনও ভাবেই ফিরে না আসে তার জন্য একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক আধিকারিক। আর সে বৈঠকে বলা হয়েছে, ভিনদেশ থেকে আগত ওমিক্রন আক্রান্ত অথবা সন্দেহভাজনদের সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে রেখে চিকিৎসা করা হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হাসপাতালগুলিতে আইসোলেশনে রাখা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ প্রমাণিত হচ্ছে।রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের জারী করা নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ওমিক্রন আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি RT-PCR রিপোর্ট নেগেটিভ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে আলাদাভাবে রেখে চিকিৎসা করতে হবে। এমনকি রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের পরবর্তী সাত দিন বাধ্যতামূলক হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে।
বর্ষবরণের আনন্দে শহরের রাস্তায় মানুষের ঢল ওমিক্রনকে বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে তা এককথায় মেনে নিয়েছেন চিকিৎসক মানস গুমটা, তাঁর কথায়, ‘সর্দি কাশি, অল্প জ্বর হলে মানুষ সেটিকে সাধারণ বলেই ধরে নিচ্ছেন আর ভয়টা ঠিক সেখানেই। সেই কারণেই অনেকেই পরীক্ষা করাতে রাজী হচ্ছেন না। আর তার ফল হতে পারে ভয়ঙ্কর। শীতের মরশুমে বয়স্ক এবং শিশুরা ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে তা যে কোন সময়েই ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে। তাই রাশ টানা একান্ত প্রয়োজন’।
এ বছর পার্ক স্ট্রিটে বিপুল ভিড়। আর তা দেখেই আতঙ্কে অনেকে। বছর ৪৭-এর আনন্দিতা রায় যেমন। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। দু’জনেরই বয়স ৮০-র আশপাশে। তাঁর কথায়, ‘এই সময়ে এমন ভিড় মোটেই ভালো নয়। সকলেই চিন্তায় আছি ওমিক্রন কতটা ক্ষতি করতে পারে তা নিয়ে। বিশেষ করে যাঁদের বাড়িতে বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষ রয়েছেন, তাঁদের চিন্তা তো বেশিই। সে সময় এমন ভিড় দেখলে ভয়ই লাগে। সংক্রমণ বাড়লে তো সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
অন্যদিকে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরই বর্ষবরণ। বর্ষবরণের রাতের শহরের চেনা ছবির কথা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকেই। তাদের মধ্যেই একজন মধ্যমগ্রামের বছর ৫০-এর বরুণ দত্ত, তাঁর কথায়, ‘বারবার বারণ করা সত্ত্বেও মানুষের এমন বেপরোয়া আচরণ সত্যি ভয়ের। মনে রাখতে হবে সকলের বাড়িতেই বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষ রয়েছেন অন্তত তাদের কথা ভেবে এবারও ভিড় এড়িয়ে চলুন। আনন্দ করুন পরিবারের সঙ্গে’।
বড়দিনে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রশাসনের তরফে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে মাইকে ঘোষণা করে সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে বিনা মাস্কে ঘুরে বেরিয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেক মানুষ এসবকে পাত্তা না দিয়েই ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেরিয়েছেন। বড়দিনের ছুটিতে শুধু পার্ক স্ট্রিট নয়, গোটা কলকাতা শহরের বহু জায়গাতেই মারাত্মক ভিড়ের ছবি ধরা পড়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, চিড়িয়াখানায় হাজির হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। আর এটাই ওমিক্রনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে, থার্ড ওয়েভের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে ভাবতে শুরু করেছেন অনেকেই। সামনেই বর্ষবরণ সেই সঙ্গে রয়েছে গঙ্গা সাগর মেলা। উৎসব আবহে ভিড় রোখাটাই এখন রাজ্য সরকারের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন কিছু মহল।
Read full story in English