RG Kar Incident: ‘We want justice’ ইস্যুতে অভূতপূর্ব প্রতিবাদের রাতেই আরজি কর হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ভেঙে দেওয়া হয় ব্যারিকেড, হাসপাতালের ভিতরে থাকা গাড়ি, প্রতিবাদীদের মঞ্চ। ছাড় পেল না পুলিশের গাড়িও। এদিকে আরজি করের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ বলছে, তাঁদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন না। পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদীদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিকে ঘিরে এমনিতে বিশাল জমায়েত হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালের সামনে। সেই সময় বহু মানুষ আরজি কর হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন। ভিতর থেকে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা বহিরাগতদের ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু, সেই নিষেধ বহিরাগতরা শোনেননি। তাঁরা মূল গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। ভাঙচুর চালান। এমারজেন্সির গেটও ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলে। হামলাকারীদের হাতে ছিল রড এবং পাথর। হামলা চালানো হয় সংবাদমাধ্যমের ওপর। কয়েকজন পুলিশকর্মীও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে জখম হন।
দুষ্কৃতীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের এলাকাছাড়া করার চেষ্টা চলে। পালটা, পাথরের আঘাতে পুলিশকর্মীদের মাথা ফেটেছে বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাসপাতালে পৌঁছেছে। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাফ। পাশাপাশি, পুলিশ কমিশনারকেও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর টিএমসি গুন্ডাদের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে অরাজনৈতিক প্রতিবাদ সমাবেশে পাঠিয়েছেন। তিনি মনে করেন যে তিনিই সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি এবং লোকেরা তাঁর ধূর্ত পরিকল্পনাটি বের করতে পারবে না যে তাঁর গুন্ডারা প্রতিবাদকারী সেজে উপস্থিত হয়ে জনতার সঙ্গে মিশে যাবে এবং আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে ভাঙচুর চালাবে। পুলিশ তাদের নিরাপদ পথ দিয়েছিল, হয় পুলিশ পালিয়ে গিয়েছিল বা অন্য দিকে তাকিয়েছিল যাতে এই লুম্পেনগুলো হাসপাতালের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সম্বলিত এলাকাগুলি ধ্বংস করতে পারে। যাতে সিবিআই তদন্তে অসুবিধা হয়। যেহেতু তারা বোকা টিএমসি গুন্ডা, তাই পরিকল্পনাটি ঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারেনি। আর, সেই কারণেই আবাসিক ডাক্তার, পিজিটি এবং ইন্টার্নদের ধরনামঞ্চ ভাঙচুর করেছে। সংহতি দেখাতে আসা কেউ কেন প্রতিবাদের কেন্দ্রকে ধ্বংস করবে? শেষ পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হয়েছে, কেন শুধু আরজি কর-এ হিংসা ছড়ানো হল?’
আরও পড়ুন - < Independence Day 2024 live updates: আরজি কর কাণ্ডে লাল কেল্লা থেকে ভাষণে গর্জে উঠলেন মোদী, দ্রুত তদন্তের আর্জি >
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, ‘রাতের অন্ধকারে হাসপাতালে ঢুকে বহিরাগতদের তাণ্ডবলীলা দেখলে শিউরে উঠবেন। ১) এরা কারা? ২) চিকিৎসক পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান মঞ্চে কীভাবে প্রবেশ করতে পারল? ৩) রাতদিন আরজি কর মেডিকেল কলেজের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না? ৪) প্রশাসনের সামনে এই তাণ্ডবলীলা চললেও প্রশাসন নিশ্চুপ কেন? ৫) তথ্য প্রমাণ লোপাট করেও শান্তি নেই? নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর এই অকথ্য নির্যাতন আবার কেন সংঘটিত হল? এর জবাব পুলিশ মন্ত্রীকে দিতে হবে। কিসের এত ভয় মাননীয়ার! এ কোন বিভীষিকাময় রাজ্যে বাস করছি আমরা? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা না নিশ্চিত করতে পারলে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন মুখ্যমন্ত্রী।’
পালটা, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, ‘আজ রাতে আরজি কর-এ গুন্ডামি ও ভাঙচুর সব গ্রহণযোগ্য সীমা অতিক্রম করেছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, আমি এইমাত্র @CPKolkata-এর সঙ্গে কথা বলেছি। আজকের হিংসার জন্য দায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, জবাবদিহি করা এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে আইনের মুখোমুখি করা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য। সরকারের কাছ থেকে এটাই তাদের ন্যূনতম আশা করা উচিত। তাঁদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
রাতেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আরজি করে আসেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনি স্পষ্ট বলেন, "হামলাকারীদের কাউকে ছাড়া হবে না। যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করা হবে।" পাশাপাশি হামলার জন্য মিডিয়ার একাংশকেই দুষেছেন কলকাতার নগরপাল। তিনি বলেন, মিডিয়ার একাংশের অতি সক্রিয়তা এবং সোশ্যাল মাধ্যমে ক্রমাগত গুজবের জেরেই এদিনের রাতের হামলার ঘটনা ঘটেছে।