জনজীবন বিপর্যস্ত, সংকটে মানব সভ্য়তা। মানুষ ঘরবন্দি। করোনা আতঙ্কে দিশা হারা মানুষ। তারই মধ্য়ে 'দান-ধ্য়ান' করে চলছে ক্য়ামেরার ফ্ল্য়াশ। চলছে লাইভ টেলিকাস্টও। বিপদে-আপদে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য় এত প্রচার! অন্য় দিকে করোনা পরিস্থিতিতে এ এক অন্য় উপাখ্য়ান। সম্পূর্ণ ভাল লাগার কাহিনী। রপকথার গল্প যেন বাস্তবে ধরা দিয়েছে।
সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্য়েও চলছে লকডাউন। সাধারণ মানুষকে বাগে আনতে রাস্তায় রাস্তায় চলছে পুলিশি টহল। জানা গিয়েছে, এমনই টহলের সময় দমদম এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ঘটে এই অবিশ্বাস্য় ঘটনা। জানলা দিয়ে এক বৃদ্ধ টহলরত পুলিশকে হাতের ইশারায় ডাকেন। তখন ওই কর্তব্য়রত পুলিশ কর্মীদের ধারনা হয় নিশ্চয় কোনও প্রয়োজনে ডাকছেন ওই বৃদ্ধ। এগিয়ে যান তাঁর বাড়িতে। তবে অবসরপ্রাপ্ত অধ্য়াপকের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান তাঁরা। না তিনি কোনও সাহায্য় চান না পুলিশের কাছে।
তাহলে ওই বৃদ্ধ কেন ডাকলেন পুলিশকে?
ওই বৃদ্ধের মানবিকতা যে কারও মন ছুঁতে বাধ্য়। সুভাষচন্দ্র বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, বয়স ৮২। দীনবন্ধু মহাবিদ্য়ালয়ের অবসর প্রাপ্ত অধ্য়াপক। পেনশনের অর্থে চলে দিন গুজরান। অষুধের জন্য় চলে যায় মাসিক পেনশনের বেশিরভাগ টাকা। পুলিশকে ডাকার উদ্দেশ্য় একটাই, এই অবসর প্রাপ্ত অধ্য়াপক করোনা প্রতিরোধের লড়াইতে নিজেকে সামিল করতে চান।
টহলরত পুলিশ কর্মীরা বৃদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর বাড়িতে যান। তাঁদের তখনও বদ্ধমূল ধারনা কোনও সাহায্য় চাইতেই তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। বৃদ্ধের হাতে একটি ১০ হাজার টাকার চেক দেখে ভুল ভাঙে পুলিশ কর্মীদের। বৃদ্ধের উদ্দেশ্য় মুখ্য়মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের নামে কাটা চেকটি পুলিশ কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনিও একজন সৈনিক হতে চান। সুভাষচন্দ্রবাবু চেকটি তুলে দিয়ে আবেদন করেন তা সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার। অবসর প্রাপ্ত অধ্য়াপকের এহেন আচরণে মুগ্ধ হয়ে যান ওই পুলিশ কর্মীরা। তিনি পুলিশ কর্মীদের জানিয়ে দেন, তাঁর হাটতে অসুবিধা হয়। তাছাড়া অনলাইন লেনদেনও তাঁর জানা নেই। তাই এভাবেই ডাকতে হয়েছে টহলরত পুলিশ কর্মীদের। বৃদ্ধ অধ্য়াপকের মহানুভবতায় বিভোর আমবাঙালী।