অতিমারির রেশ কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে কলকাতা। দু’বছর মানুষজন সেভাবে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। ঘরবন্দী থেকেই পুজোর যৎসামান্য আনন্দকে ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিল আপামোর ‘পুজোপ্রেমী বাঙালি’ আর এবার তাই পুজোর সবটুকু আনন্দকে চেটেপুটে উপভোগ করতে ময়দানে নেমে পড়েছে মানুষজন। মহালয়া থেকেই কলাকাত্র রাজপথে জন-জোয়ার। আর তা সামলাতে কার্যত হিমসিম খেতে হয় কলকাতা পুলিশকে।
চলতি বছর পুজোর বাড়তি পাওনা ইউনেস্কোর তরফে হেরিটেজ স্বীকৃতি। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে পুজো অনুদান। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। আর তারপরেই বাঙালির ‘প্রাণের পুজো’ দুর্গাপুজো। শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা। পুজো যতই এগোচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেরারা সেরা জাহির করার পালা। চারিদিকে পুজো-পুজো গন্ধ।
কার্যত মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় শহর কলকাতার দুর্গাপূজা। কলকাতার পুজো মানেই পুজো হপিং, সাজ-গোজ, দেদার আড্ডা, মজা, রাতভোর ঠাকুর দেখা! আর তার সঙ্গে ট্রাফিক জ্যাম তো রয়েছেই। ফি বছর পুজোর কটা দিন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে থাকে শহর কলকাতা। করোনা অতিমারির কথা মাথায় রেখে মানুষজন সেভাবে গত ২ বছর মণ্ডপমুখো হয়নি। এবার যে পুজোর আনন্দ পুরোদস্তর উপভোগ করবে উৎসব প্রিয় বাঙালি তা কার্যত কলকাতা পুলিশের তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
এবার পুজোয় কলকাতার মানুষের পাশাপাশি জেলা, দেশ এমনকী বিদেশ থেকেও মানুষজন ভিড় করবে মণ্ডপে মণ্ডপে। ফলে পুজোর কটা দিন কলকাতা যে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে সেকথা মেনে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তাই যানযট সামাল দিতে আগে-ভাগেই কলকাতা পুলিশের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক পরিকল্পনা। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “ ইউনেস্কোর তরফে হেরিটেজ স্বীকৃতি এবং করোনার দাপট কমাতে কলকাতার পুজোয় ভিড় বাড়বে, তাই ট্রাফিক পরিষেবাকে অবিচ্ছিন্ন রাখতে ট্রাফিক পুলিশের তরফে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে”।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হচ্ছে বেহালা এবং টালিগঞ্জ এলাকাতে যানজট নিয়ন্ত্রণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি লেকটাউন, শ্যামবাজার নিউ আলিপুর, বেহালা থানা এলাকায় যানযট নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়াও শহরের বড় পুজো সংলগ্ন এলাকা গুলিতে যান নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফে। ইতিমধ্যেই শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, সল্টলেকের এফডি ব্লক ও টালা প্রত্যয়ের পুজো উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে।
মহালয়ার সন্ধে থেকে রাজপথ কার্যত মানুষের দখলে চলে গিয়েছে। পুজোর ভিড় এড়াতে ইতিমধ্যেই বাড়তি মেট্রো চালানোর কথা ঘোষণা করেছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুলিশের পুজো গাইড ম্যাপ পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সহজেই পুজো মণ্ডপে পৌঁছে যেতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: < পোষ্য-বান্ধব পুজোমণ্ডপ উদ্বোধনে ডগ স্কোয়াড, অ্যাটলাস ক্লাবের পুজোয় মন ভাল করা ছবি >
শ্রীভূমির পুজোয় প্রতিবছরেই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে মাত্রাছাড়া। আর সেকথা মাথায় রেখেই ভিআইপি রোড জুড়ে একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তীব্র যানজটের প্রভাব পড়ে উত্তর কলকাতাতেও। যানজট দেখা যায় মা ফ্লাইওভারেও। এবার যানযট এড়াতে ভিআইপি রোডের যত্রতত্র দর্শনার্থীদের দাঁড়াতে দেওয়া হবে না বলেই কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। ভিআইপি রোডের সাবওয়ে দিয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপার করতে বলা হয়েছে। যানযট এড়াতে কলকাতা থেকে বিমানবন্দরগামী গাড়িগুলিকে প্রয়োজনে চিংড়িঘাটা থেকে নিউ টাউন হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। এয়ারপোর্ট থেকে কলকাতা মুখী গাড়িগুলিকে ভিড় এড়াতে নিউটাউন হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।
মা ফ্লাইওভার, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, দমদম, লেকটাউন, চিংড়িঘাটা ক্রসিং সল্টলেক কলেজ মোড় এলাকায় পুজোর দিনগুলিতে ব্যাপক যানযটের আশঙ্কা এবং গাড়ির গতি শ্লথ থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফে। পাশাপাশি কলেজ স্ট্রিট, থিয়েটার রোড, এজেসি বোস রোড, মল্লিকবাজার, হাজরা পার্ক এলাকাতেও ব্যাপক যানযটের আশঙ্কা করা হচ্ছে উৎসবের দিনগুলিতে।