ট্র্যাফিক আইন ভেঙেছিলেন কখনও? এখনও জরিমানার টাকা শোধ করেননি? এবার সেই বোঝা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কারণ ট্র্যাফিক জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে এবার দারুণ ছাড় দিচ্ছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। বকেয়া জরিমানা মেটাতে চালু করা হলো ৭৫ দিনের অভিনব প্রকল্প। ‘ওয়ান টাইম ট্র্যাফিক ফাইন সেটলমেন্ট স্কিম’ নামের এই পরিষেবার কথা এদিন লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করলেন নগরপাল রাজীব কুমার।
কী এই সেটলমেন্ট স্কিম? অল্প কথায় বললে, ট্র্যাফিক জরিমানা মেটানো সহজ করে দিচ্ছে এই প্রকল্প। জরিমানা জমা দেন, এমন শহরবাসীর সংখ্যা যে খুব বেশি নয়, এটা অনস্বীকার্য। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পাহাড়প্রমাণ জরিমানা বকেয়া রয়েছে। তা যাতে দ্রুত শহরবাসীরা মেটান, সেজন্যই এই পরিষেবার সূচনা করল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। এ প্রসঙ্গে রাজীব কুমার জানান, "লোক আদালত ছাড়াও, পুলিশের কাছে প্রচুর বকেয়া মামলা রয়েছে, গত ১৫ বছরেরও অনেক মামলা বকেয়া রয়েছে। সেগুলি মেটানোর জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শহরে ফের মদ্যপ চালকের উৎপাত, শিক্ষিকার ‘শ্লীলতাহানি’
লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত যাঁদের ট্র্যাফিক জরিমানা বকেয়া রয়েছে, তাঁরা যদি ১ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা মেটান, তবে মোটা ছাড় পাবেন। কী সেই ছাড়? এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (৩) সুপ্ৰতিম সরকার জানান, "১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ৪৫ দিনের মধ্যে যাঁরা বকেয়া ট্র্যাফিক জরিমানা মেটাবেন, তাঁরা ৬৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। অর্থাৎ, জরিমানার মাত্র ৩৫ শতাংশ দিলেই হবে। ধরুন, কারও জরিমানা ১,০০০ টাকা, তাহলে তাঁকে দিতে হবে ৩৫০ টাকা। কারও ২,০০০ টাকা জরিমানা থাকলে ৭০০ টাকা দিলেই হবে। দ্বিতীয় দফায় ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া জরিমানা মেটালে পাবেন ৫০ শতাংশ ছাড়। অর্থাৎ, ১,০০০ টাকা জরিমানা থাকলে দিতে হবে ৫০০ টাকা। ১৩ ফেব্রুয়ারির পর এই সুযোগ থাকবে না।"
ট্রাফিক জরিমানা মেটাতে অভিনব উদ্যোগ কলকাতা পুলিশের #KolkataPolice pic.twitter.com/H4BnF6N6mQ
— IE Bangla (@ieBangla) November 28, 2018
কীভাবে পুরনো বকেয়া জরিমানা জমা দেবেন? লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে যে, অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যাবে। তাছাড়া ২৫ টি ট্র্যাফিক গার্ড ও লালবাজারে গিয়েও মেটানো যাবে। এই পরিষেবায় ভাল সাড়া মিললে আরও আউটলেট খোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এতেই শেষ নয়, জরিমানা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনও ভুল না হয়, সে ব্যাপারেও জোর দিচ্ছে লালবাজার। অর্থাৎ ভুলবশত কাউকে জরিমানা করা হলো কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ তো থাকছেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সিসিটিভি থাকে না। সেক্ষেত্রে বিশেষ অনুসন্ধান কমিটি গড়া হচ্ছে ডিসি ট্র্যাফিকের নেতৃত্বে। যদি দেখা যায় কারও নামে ভুলবশত জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, তাহলে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
বকেয়া জরিমানা মেটাতে আরও কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। এ প্রসঙ্গে সুপ্রতিমবাবু জানিয়েছেন, "৭৫ দিনের প্রকল্প শেষ হলে, সরকারের কাছে বিশেষ প্রস্তাব পাঠাব আমরা। যাঁরা লাইসেন্স ও ইনসিওরেন্স পুনর্নবীকরণ করবেন, তাঁরা যেন কলকাতা পুলিশের থেকে একটা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে নেন এই মর্মে, যে তাঁদের কোনও বকেয়া জরিমানা নেই।"