আবারও আম আদমির গায়ে ‘হাত’ তোলার অভিযোগ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মীর গায়ে ‘টাচ’ করায় ‘চড়’ খেতে হল শহরের এক মহিলাকে। বুধবার সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিট চত্বরে এমন ঘটনাই ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠল। চড় নয়, "ভুলবশত" হাতের ওয়াকি-টকি মহিলার গালে লেগে যায় বলে বলে পাল্টা দাবি পুলিশ মহলের একাংশের। শুধু তাই নয়, জনৈক পুলিশকর্মীকে ওই মহিলা শুধু ‘টাচই’ করেননি, তাঁর জ্যাকেট ধরে টেনেছেন বলেও দাবি। যদিও পুলিশের এহেন দাবি অস্বীকার করেছেন অভিযোগকারিণী।
ঠিক কী অভিযোগ? পার্ক স্ট্রিটের একটি নামী সংস্থায় কর্মরত ওই মহিলা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "গতকাল সন্ধে ৭.১৫ নাগাদ কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাপ ক্যাব ডেকে উঠতে যাচ্ছিলাম। এপিজে হাউসের সামনে ক্যাবটিকে ডেকেছিলাম, কিন্তু উনি ক্যাবটিকে দাঁড়াতে দিচ্ছিলেন না। ক্যাবটি রাসেল স্ট্রিট থেকে আসছিল। প্রথমে পার্ক হোটেলে পৌঁছয়। সেখানে আমরা উঠতে পারিনি ক্যাবে, কাজেই গাড়ির পিছনে দৌড়চ্ছিলাম। পুলিশ লাঠি দিয়ে মারছিল গাড়িটিকে, কাজেই চালক অনেকটা সামনের দিকে এগিয়ে যান। পিছনে পুলিশ ছিলেন। ক্যাবটি আমরাই ডেকেছিলাম, এটা জানানোর জন্য সেসময় ওই পুলিশকর্মীর পিঠে হাত দিই।"
আরও পড়ুন: ডাক্তারকে চড় মারিনি, ধাক্কা মেরেছি, বললেন যাদবপুরের ওসি
এরপর? "পিঠে হাত দেওয়ায় উনি পিছনে ঘুরে বাঁ হাতে আমায় চড় মারেন। এ সময় আমার পাশে সহকর্মীরা ছিলেন। রাস্তায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও ওঁকে বলেন, 'কেন মারলে'?" ক্ষমা চাওয়া তো দূর অস্ত, উল্টে ওই পুলিশকর্মী তাঁকে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেছেন মহিলা। তাঁর কথায়, "উনি উল্টে আমায় বলেন, 'আপনি জানেন কী করেছেন? পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছেন, জানেন জেল হতে পারে'?" এমন অবস্থায় কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিককে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানান ওই মহিলা। এরপরই পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এদিকে পুলিশের একাংশের দাবি, "ওই মহিলা আসলে পুলিশকর্মীর জ্যাকেট ধরে টেনেছিলেন। সেসময় পিছনে ঘুরতে গিয়ে ওই পুলিশের হাতের ওয়াকি-টকি মহিলার গালে লেগে যায়।" পুলিশের এহেন দাবি অস্বীকার করে অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, "পুলিশ মিথ্যে কথা বলে এসব সাজাবে, খুব স্বাভাবিক। থানায় যখন গিয়েছিলাম, তখনও আমার গালে চড়ের দাগ ছিল। আশপাশের সকলে দেখেছেন।"
পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে এই চড় মারার অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতায়। কোন পথে এগোচ্ছে তদন্ত? জবাবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ডিসি সাউথ মিরাজ খালিদ বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কিছু হয়ে থাকে, সেরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
পুলিশের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ অবশ্যই এই প্রথমবার নয়। কয়েকমাস আগেই সিএমআরআই হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তারকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছিল যাদবপুর থানার ওসি পুলক দত্তের বিরুদ্ধে। যে ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের চিকিৎসক মহল। ফের সেই নিদর্শন সামনে আসায় আরেক কলকাতা পুলিশকর্মীর আচরণ আপাতত প্রশ্নচিহ্নের সামনে।