একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এখনও উদাসীন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েও আশানুরূপ কোনো বার্তা এসে পৌঁছয়নি অনশন মঞ্চে। বরং ২১শের সভা মঞ্চ থেকে জোরগলায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, "কেন্দ্রের মতো বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যান।" কাঠফাটা রোদে, ছাউনির তলায় ভুখা পেটে এখনও শুয়ে ১৭ জন প্রাথমিক শিক্ষক। "ন্যায্য ও প্রাপ্য" দাবির সমর্থনে আমরণ অনশনের আজ ১১ দিন।
সোমবার হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যান অনশনরত শিক্ষিকা পৃথা বিশ্বাস। তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। জ্ঞান ফিরলে ফের তিনি এসে হাজির হন অনশন মঞ্চে। মঙ্গলবার সকাল থেকে অসুস্থতার হার ক্রমশ বাড়ছে। অনশনরত প্রাথমিক শিক্ষিকা অপরাজিতা সেন ও সুচিত্রা ঘোষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সমর্থনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী তথা অধ্যাপিকা মিরাতুন নাহার চার ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে যোগ দিয়েছেন। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্যও এদিন অনশন মঞ্চে আসেন। অনশনরত শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন। এর আগে অনশন মঞ্চ ঘুরে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, এবং অন্যান্য দলের নেতারাও।
আরও পড়ুন: ভুখা পেটে রাস্তায় শিক্ষকরা, উদাসীন সরকার, দেখুন ছবি
আন্দোলনে শামিল প্রাথমিক শিক্ষক শান্তনু মণ্ডল বলেন, "এ কেমন সরকার? ভুখা পেটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। কেন আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন? কেন্দ্রের কথামতো নূন্যতম যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আমাদের। তাহলে আজ কেন বেতন বাড়ানোর দাবিতে আমাদের বলা হলো কেন্দ্রে চলে যান?"
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশনে জট আরও জোরালো হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে। অনশনের অষ্টম দিনে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে পার্থবাবু বলেন, "এভাবে বেতনবৃদ্ধি কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়।" শিক্ষকদের এই দাবিকে কার্যত 'যুক্তিহীন' বলেই উল্লেখ করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে ‘অসহায়’ শঙ্খ ঘোষ
প্রসঙ্গত, ন্যায্য বেতনের দাবিতে ও বেআইনিভাবে বদলির প্রতিবাদে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে ১২ জুলাই থেকে আমরণ অনশনে বসেন প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। এরই সমর্থনে ২১ জুলাই সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, “শিক্ষামন্ত্রীর উপর আমাদের আর ভরসা নেই। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”