Advertisment

ছত্রে ছত্রে মিল! কৃত্তিকার আত্মহত্যায় কাঠগড়ায় এই ওয়েব সিরিজ

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অবসর সময়ে নিয়মিত বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ দেখত কৃত্তিকা। তার ল্যাপটপ ও মোবাইল পরীক্ষা করে ওই বিশেষ ওয়েব সিরিজটিও পাওয়া গিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ওয়েব সিরিজের ছাপ দেখছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দাদের অনুমান, 'থার্টিন রিজনস হোয়াই' নামের ওই ওয়েব সিরিজটির অনুসরণেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ওই মেধাবী পড়ুয়া। ইতিমধ্যেই আত্মঘাতী কিশোরীর ল্যাপটপ এবং মোবাইল খুঁটিয়ে দেখে তদন্তকারীরা অন্য কয়েকটি ওয়েব সিরিজের পাশাপাশি 'থার্টিন রিজনস হোয়াই'-এর খোঁজও পেয়েছেন।

Advertisment

গত শুক্রবার ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ওয়াশরুম থেকে উদ্ধার হয় কৃত্তিকা পাল নামে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ। হাতের শিরা কাটা। মুখে জড়ানো রয়েছে প্লাস্টিক। পুলিশ আধিকারিকেরা প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করেছিলেন, আত্মহত্যা নয়, খুন করা হয়েছে কৃত্তিকাকে। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পর লালবাজারের গোয়েন্দারা নিশ্চিত, আত্মহত্যাই করেছে ওই কিশোরী। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথমে হাতের শিরা কেটেছিল কৃত্তিকা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে নিজের মুখে প্লাস্টিক বেঁধে নেয় সে। শিরা কাটার ফলে রক্তপাত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শ্বাসরোধ হয়েই মারা গিয়েছে ওই ছাত্রী।"

দশম শ্রেণির ওই পড়ুয়ার আত্মহত্যার সঙ্গে ওয়েব সিরিজটির মিল কতখানি? এক পুলিশ অফিসারের জবাব, "শুধু ছায়া বললে ভুল হবে, 'থার্টিন রিজনস হোয়াই'-তে যা দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে প্রায় হুবহু মিল রয়েছে কৃত্তিকার আত্মহত্যার। ওই ওয়েব সিরিজে ১৭ বছর বয়সী এক নাবালিকা, নাইয়া হ্যানার, মানসিক অবসাদে ভুগছিল। এরপর সে প্রথমে হাতের শিরা কাটে, তারপর নিজেই নিজের শ্বাসরোধ করে মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। ওয়েব সিরিজটিতে আত্মহত্যার অনুপূঙ্খ বিবরণ রয়েছে। কৃত্তিকা যেমন তিনপাতার সুইসাইড নোটে স্পষ্টভাবে আত্মহত্যার কারণ লিখেছিল, নাইয়াও তেমনই সিডির মাধ্যমে নিজের বক্তব্য রেখে গিয়েছিল।" অন্য এক তদন্তকারী জানান, তিন পাতার সুইসাইড নোটের প্রথম দু-টি পাতা কৃত্তিকা আগেই লিখে রেখেছিল। তৃতীয় পাতাটি সে লেখে মুখে প্লাস্টিক জড়়ানোর ঠিক আগে।

লালবাজার সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অবসর সময়ে নিয়মিত বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ দেখত কৃত্তিকা। তার ল্যাপটপ ও মোবাইল পরীক্ষা করে 'থার্টিন রিজনস হোয়াই' ওয়েব সিরিজটিও পাওয়া গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই ওয়েব সিরিজটি স্ট্রিম হওয়ার ৯ মাস পরে একটি মার্কিন সংস্থা সমীক্ষা করে জানায়, টিন-এজারদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ব্যপকভাবে বেড়ে যাওয়ার জন্য 'থার্টিন রিজনস হোয়াই' বেশ কিছুটা দায়ি।

এস এস কে এম হাসপাতালের ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ডিরেক্টর ডাক্তার প্রদীপকুমার সাহা বলেন, "কৃত্তিকা আত্মহত্যার জন্য বেশ কিছুদিন যাবত প্রস্তুতি নিয়েছিল। আমার ধারনা, তীব্র অবসাদ গ্রাস করেছিল ওকে। সেই কারণেই শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত, যখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, তখনও মুখ থেকে প্লাস্টিক সরায়নি। তবে ওই ওয়েব সিরিজটি অত্যন্ত সমস্যাজনক। যে ছেলেমেয়েরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে, তাদের জন্য এগুলি ভয়ানক। কৃত্তিকার আত্মহত্যার সঙ্গে ছত্রে ছত্রে মিল রয়েছে ওই ওয়েব সিরিজটির।"

দক্ষিণ কলকাতার একটি নামজাদা বেসরকারি স্কুলের কাউন্সেলর অনিন্দিতা সেনগুপ্তের কথায়, "ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এই ধরনের ওয়েব সিরিজগুলি ভয়ানক খারাপ ভূমিকা পালন করে। জানি না, এর সমাধান কোথায়। ব্লু-হোয়েলের সময়েও আমাদের একই ধরনের অসহায়তা গ্রাস করেছিল।"

kolkata police
Advertisment