এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের অনশন পড়ল ২৬ দিনে। কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন-অবস্থান শুরু হয়েছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। এখনও অবস্থান তুলে নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অনশনকারী মইদুল ইসলামের আক্ষেপ, "এখান থেকে একটু দূরেই ২৬ দিন অনশন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। দিদি আমাদের দিকে একবার নজরও দিলেন না। একবার তিনি এলেন না।" অনশনে অসুস্থ ১০০ জনের ওপর। অনেকে আবার হাসপাতালে ইঞ্জেকশনের ছুঁচ ফোটানোর ভয়ে হাসপাতালমুখো হচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, "ভেইন (শিরা) খুঁজে না পাওয়ার ছুতোয় দুতিন জায়গায় ছুঁচ ফুটিয়ে দিচ্ছে।"
এভাবেই প্ল্যাকার্ড হাতে নিজেদের দাবি নিয়ে সোচ্চার অনশনকারীরা। ছবি: শশী ঘোষ
না, এখনই অনশন তুলে নিচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। যতক্ষণ না শিক্ষামন্ত্রীর গড়া কমিটি লিখিত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ততক্ষণ অনশন তুলে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। আন্দোলনকারীরা বলেন, "আজ ওই কমিটির বৈঠক রয়েছে। আগামিকাল, মঙ্গলবার আমরা অভিযোগপত্র তুলে দেব তাঁদের হাতে। দেখব তাঁরা কী করেন। তারপর অনশন তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।"
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের অনশন তুলে নিতে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু অনশন তোলেননি আন্দোলনকারীরা। প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাথই তাঁদের অস্থায়ী ঠিকানা। যারা অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা ফের অনশন-অবস্থানে ফিরে এসেছেন।
ধর্মতলাই এখন অস্থায়ী ঠিকানা আন্দোলনকারীদের। ছবি: শশী ঘোষ
এখানে অনশন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, রক্ত আমাশায় ছটফট করেছেন। মইদুল ইসলামের বক্তব্য, "ডেঙ্গু, আমাশা শুধু নয়, অনেকেরই বুকে ইনফেকশন হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। এখন অনেকের চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। জলের জন্য সমস্যা হচ্ছে।" লোকসভার প্রচার চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। খবর রাখছেন আপনারা? মঈদুলের জবাব, "ভোটের কোনও খবরই জানি না। এখন এটাই আমাদের ঘর-বাড়ি হয়ে উঠেছে। আন্দোলন ছাড়া কিছুই মাথায় নেই। বাড়ি ফিরলে ওসব বুঝতে পারব।"
অনশন এক মাস ছুঁতে চলেছে। আর কতদিন এভাবে অপেক্ষা করতে হবে? প্রশ্ন অনশনকারীদের। ছবি: শশী ঘোষ
সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে, এই ইস্যুতে ধর্মতলায় ২৬ দিন অনশন করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টলে গিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। এবার যদিও বিষয়বস্তু একেবারেই ভিন্ন, কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, কবি-সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, ছাত্র সংগঠন, প্রাক্তন আমলা, গণসংগঠনের নেতৃত্ব প্রভৃতি এসএসসি কর্মপ্রার্থী অনশনকারীদের অবস্থানে গিয়ে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তাঁদের পাশে আছেন বলে কড়া বিবৃতি দিচ্ছেন। এদিকে রাজ্য জুড়ে জোরকদমে শুরু হয়েছে লোকসভার প্রচার। অনশন-অবস্থান এক মাস ছুঁতে চলেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, স্বভাবতই চাপ বাড়ছে রাজ্য সরকারের ওপর।