Advertisment

ওমিক্রনের হাত ধরেই কি করোনার তৃতীয় ঢেউ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ভারতে ওমিক্রনের হাত ধরেই তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না 'হু' এর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তার অন্যতম কারণ ভারতের জনঘনত্ব!

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

ওমিক্রনের হাত ধরেই কী আছড়ে পড়তে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ? প্রশ্ন সকলের

দীর্ঘ প্রায় ২ বছর করোনার ফাঁড়া অনেকটা কাটিয়ে নিউ নর্মালে ফিরছিল ভারত তথা পৃথিবী। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি 'ওমিক্রন' ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। বি.১.১.৫২৯ কোভিড ভেরিয়েন্ট বা ওমিক্রনের অস্তিত্ব বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৯১ টি দেশে পাওয়া গিয়েছে। আর যা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও নাকি শক্তিশালী এই নতুন প্রজাতি। তাই প্রথম থেকেই এবিষয়ে সতর্ক করেছে 'হু'। এই মুহুর্তে ওমিক্রন আতঙ্কে ত্রস্ত সমগ্র বিশ্ব।

Advertisment

আর এবার ভারতে ওমিক্রনের হাত ধরেই তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না 'হু' এর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিকে একই সুর ধরা পড়েছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া গলাতেও। এইমসের ডিরেক্টর সতর্ক করে বলেন, 'ব্রিটেনের মত পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখা উচিত।' রণদীপ গুলেরিয়ার ধারণা, সামনের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এইমস প্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে ওমিক্রন। এমনকী অ্যান্টিবডিকেও ধোকা দিতে পারে। তাই এই ভাইরাল স্ট্রেনের সংক্রমণ থামাতে খুব দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ করতে হবে। মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব বিধি। মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও অনীহা বিপদ ডেকে আনতে পারে”। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক, একথাও জানিয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় ওয়েভে বিশ্বজুড়ে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট প্রাণঘাতী হয়ে উঠলেও ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তা হবে না বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ওমিক্রনের বলি একজনই। তিনি ব্রিটেনের নাগরিক। আক্রান্তদের উপসর্গও সামান্য। কিন্তু তার পরেও স্বস্তিতে নেই বিশেষজ্ঞরা। কারণ, করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজিত হয়েছে। ডেল্টার থেকে তিন গুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রন।

২৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের। পোশাকি নাম বি১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৯১ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কিন্তু ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। হু-র ধারণা, এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন সংক্রমণের যে ছবি সামনে এসেছে, তা বাস্তব চিত্র নয়। প্রকৃত আক্রান্ত আরও বেশি। উল্লেখ্য, ব্রিটেনে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই। সেই তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণেই বলা যায়। সবমিলিয়ে গোটা দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ পার করেছে।

publive-image
বড়দিনের আগে ওমিক্রনের থাবায় জর্জরিত ব্রিটেন!

ইতিমধ্যেই কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ওয়ার রুম সক্রিয় করার জন্য এবং ট্রেন্ড ও সংক্রমণ বৃদ্ধির উপর নজর রাখার কথাও বলেছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ এবং রিপোর্ট পেলেই বিশেষ পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ এই নির্দেশিকা দিয়েছেন। কারণ, গতকালই দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ পার করেছে।

ওমিক্রন নিয়ে রীতিমত উদ্বেগ ধরা পড়েছে প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চৌধুরীর গলাতে। তাঁর কথায়, “যে ভাবে ওমিক্রন দিনে দিনে তার বিস্তার ঘটাচ্ছে তা এখনই রুখতে না পারলেই বিপদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাতে প্রথম করোনা আক্রান্তের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘বিদেশ ফেরত মাত্র একজন যুবক সেই সময় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাংলায় সেই সংখ্যাটা ১ থেকে শুরু করে যে সংখ্যায় আজ অবধি পৌঁছেছে তা থেকে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা নেওয়া উচিৎ’! ‘বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, আসন্ন ফেস্টিভ সিজনে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে”।

Coronavirus India Update
ভরতের জনঘনত্বই মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মানস গুমটা ওমিক্রন প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “ওমিক্রন ইতিমধ্যেই মাথা ব্যাথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপাতত দুটি রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি তাই নিয়ে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। সব প্রস্তুতি এখন থেকেই সেরে ফেলা উচিৎ বলেই মনে করেন তিনি। অন্যদিকে তিনি বলেন, আন্তঃরাজ্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেকবশি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন আরও বেশি নজরদারী, না হলেই যে কোন সময়েই বিপদ থাবা বসাতে পারে আমাদের রাজ্যেও”। তাঁর কথায় দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসে লড়াইয়ে ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী সকলেই আজ বড়ই ক্লান্ত। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে তা রোখা সত্যিই আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে। তিনি সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও এব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন”।

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব শাখার ডিরেক্টরের কথায়, করোনার নতুন প্রজাতি মানেই যে সেটা আগের গুলোর থেকে আরও খারাপ প্রভাব ফেলবে তা নয়, কিন্তু সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করা উচিৎ, কারণ এই মুহূর্তে নিশ্চয়তা কিছুতেই নেই। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতের উপর বাড়তি সতর্কতা রাখার পরামর্শ দিচ্ছে 'হু'। এর প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এই দেশের জন সংখ্যা ও জন ঘনত্ব।

ভারতে ওমিক্রনের থাবা-

ভারতে ইতিমধ্যেই ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ পার করেছে। যা নিঃসন্দেহে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দেশের স্বাস্থ্য দফতরের কপালে। তবে এরই মাঝে জোর দেওয়া হচ্ছে ভারতের সার্বিক টিকাকরণ ও জন সচেতনতায়। দেশের প্রতিটি জায়গায় বাধ্যতামূলক রয়েছে মাস্কের ব্যবহার। ওমিক্রন ঠেকাতে সবরকমের প্রয়াস জারি রয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৫০ বার জিনের বিন্যাস বদলে তৈরি হয়েছে নতুন প্রজাতি। এর মধ্যে ৩২ বার বদলেছে স্পাইক প্রোটিনের চরিত্র। তবে এই প্রজাতি প্রতিরোধ করা যে যাবে না তা একদমই নয়, এমনটাই মত 'হু'এর। পাশাপাশি বিশ্বের যে যে দেশে এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনের দেখা মিলেছে সেই সেই দেশগুলিকে আরও ডেটা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে 'হু'। এই ডেটা বিশ্লেষণ করার জন্য বহু বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে। সব তথ্য বিশ্লেষণ করে ওমিক্রন ঠেকানর জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন তা নেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এমনটাই জানিয়েছেন 'হু'এর শীর্ষ কর্মকর্তা।

publive-image
আতঙ্ক শিশুদের নিয়েও!

সব মিলিয়ে ওমিক্রন আতঙ্কে নাজেহাল বিশ্ব। ভারতে পরিস্তিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই ওমিক্রন ওয়ার রুম তৈরির কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। যে সমস্ত জেলায় সংক্রমণের হার বেশি সেখানে নাইট কার্ফু, কোভিড বিধিনিষেধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বড় জমায়েতের ওপরেও জারী করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক ভারতে কোন রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কত-

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাতটি রাজ্যে ওমিক্রন এখন দুই সংখ্যা পার করেছে। রাজ্যগুলি হল, মহারাষ্ট্র (৫৪), দিল্লি (৫৪), তেলেঙ্গানা (২০), কর্ণাটক (১৯), রাজস্থান (১৮), কেরল (১৫) এবং গুজরাট (১৪)

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

India WHO coronavirus Third Wave Omicron
Advertisment