বয়স নেহাতই একটি সংখ্যা-মাত্র। প্রতিদিন তা যেন প্রমাণ করে চলেছেন কোন্নগরের অসিত নন্দী। সংসার চালাতে গত ৩৫ বছর ধরে ডালপুরী বিক্রি করছেন আশি ছুঁইছুঁই এই 'তরুণ'। কোন্নগর শহরে 'ডালপুরী দাদু' নামেই পরিচিত অসিতবাবু। সাইকেলে চলচ্চিত্রম মোড়ে পৌঁছতেই তাঁর হাতের ডালপুরী খেতে রীতিমতো ভিড় জমে যায়।
কোন্নগরের অসিত নন্দী। প্রতিদিন সকাল ১০ টা বাজলেই পুরোনো লড়-ঝড়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তাঁর সাইকেলের দুই হ্যান্ডেলে থাকে দুটি ড্রাম। ওই ড্রামেই ডালপুরী নিয়ে বের হন অসিত নন্দী। গন্তব্য বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের চলচ্চিত্রম মোড়। বটগাছতলায় দাদুর হাতে ডালপুরী খেতে ভিড় জমান আট থেকে আশি। কোন্নগরের বকুলতলায় বৃদ্ধা স্ত্রী আল্পনাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন অসিতবাবু। পূর্বপুরুষের তৈরি করা ছোট্ট দোতলা বাড়ি। বাড়ির একতলায় ভাড়া দেওয়া। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন বহু আগেই।
তবে অসিতবাবু পেশাদার হকার নন। একসময় কোন্নগর এলাকার একটি বেসরকারি কারখানায় তিনি ফিটারের কাজ করতেন। কিন্তু হঠাৎই লোকসানের মুখে পড়ে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে গত ৩৫ বছর ধরে তিনি বেছে নিয়েছেন এই ডালপুরী বিক্রির পেশাকে। অসিতবাবুর কথায়, "ছোট থেকেই ভাজাভুজি বানাতে পারদর্শী ছিলাম। বাড়িতে আমি নিজেই এসব তৈরি করে সবাইকে খাওয়াতাম। কাজ চলে যাওয়ার পর ভাবলাম, কিছু একটা করতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য এই ডালপুরীকেই বেছে নিলাম।"
আরও পড়ুন- স্কুল ভবন সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ রাজ্যের, পুজোর পর স্কুল খোলার আগাম পদক্ষেপ?
এই বৃদ্ধ বয়সেও নিজের হাতে ডালপুরী বানান অসিতবাবু। সঙ্গে কোনওদিন থাকে ছোলার ডাল, কোনওদিন আবার আলুর দম, ঘুগনি। প্রায় দেড়শো পিস ডালপুরী তাঁর রোজ বিক্রি হয়। গাছের তলায় ঠায় ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ডালপুরী বিক্রি করেন বৃদ্ধ অসিত নন্দী। বিক্রিবাট্টা শেষে ফের সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরেন। গত কয়েক দশক ধরে কোন্নগর শহরের বহু বাসিন্দা বাড়িতে জলখাবার হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যান আসিতবাবুর তৈরি ডালপুরী। ছোটরা তাঁকে ডাকেন 'ডালপুরী দাদু' নামে। শরীর যতদিন সঙ্গ দেবে ততদিন পেশায় থাকবেন অসিতবাবু, এমনই জানিয়েছেন বৃদ্ধ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন