মোদী সরকারকে উৎখাতে তৈরি হয়েছে 'ইন্ডিয়া' জোট। ২৬ দলের ওই বিরোধী জোটে শামিল কংগ্রেস, তৃণমূল। হুঙ্কারের পর হুঙ্কার দিলেও শেষ পর্যন্ত জোড়া-ফুল শিবিরের সঙ্গে সমঝোতা মেনে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। যা নিয়েই জোর সংঘাত বাংলার হাত শিবিরে। তৃণমূলের সঙ্গে কোনওরকম জোটের বিরুদ্ধে আগেই মুখ খুলেছিলেন এ রাজ্যের 'ডাকাবুকো 'কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। এবার আর রাখঢাক করলেন না। এই 'সমঝোতা'র জন্য সরাসরি প্রদেশ সভাপতিকেই নিশানা করলেন কৌস্তভ।
সম্প্রতি 'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'আমরা পুকুর, বৃহত্তর জোট হল নদী। এখন পুকুর ছেড়ে নদীর দিকে যাওয়ার সময়। পুকুর নিয়ে ভেবে বসে থাকলে হবে না।' এদিন তারই পালটা দিলেন কৌস্তভ বাগচী। ফেসবুক বার্তায় বোঝানোর চেষ্টা করলেন, লোকসভা ভোটে বাংলায় হাই-কমান্ড 'চাপিয়ে দেওয়া' নির্দেশ অন্ধের মতো পালন করা হবে না।
সোমবার ফেসবুক পোস্টে কৌস্তভ বাগচী লিখেছেন, 'পুকুর, নদী বুঝিনা। দিল্লির স্বার্থে আর গিনিপিগ হতে রাজি না। তৃণমূল আমাদের চোখে চোর ছিল, আছে ও থাকবে। তৃণমূল আমাদের চোখে গণতন্ত্রের হত্যাকারী ছিল, আছে ও থাকবে।'
প্রদেশ কংগ্রেসের তরুণ নেতার এই পোস্টেই বড় ইঙ্গিত রয়েছে মনে করা হচ্ছে। এর আগেই নানা বিষয়ে দিল্লির নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কৌস্তভ বাগচী। লাভের ভাণ্ডার যে ভড়েছে তেমনটা বলা যাবে না। এবার 'লড়াকু' প্রদেশ সভাপতি অধীরকেই আক্রমণ করে বসেছেন আইনজীবী নেতা। কাজের কাজ হবে? না হলে কী করবেন কৌস্তভ?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে কৌস্তভ বাগচী বলেছেন, 'আমরা বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তো কংগ্রেসটা করি। পরিস্থিতি তৈরি হোক তারপর বন্দোবস্ত ঠিক হয়ে যাবে।' দলে থেকে কী লড়াই সম্ভব? কৌস্তভের জবাব, 'দল ছাড়ার চিন্তাভাবনা এখনই নেই। এটা অলীক স্বপ্নের মতো। সেই পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তাই দল ছাড়ার বিষয় নিয়ে কথা বলাটাই অমূলক।' কিন্তু দলে যে এই ইস্যুতে অস্বস্তি রয়েছে সেটা তো স্পষ্ট? তরুণ আইনজীবীর উত্তর, 'জন্মকাল থেকেই কংগ্রেসের চরমপন্থী নরমপন্থী মতামত রয়েছে। দল ছেড়ে চরমপন্থীরা সবসময় বেরিয়ে গিয়েছে তেমন নয়।' তবে এখানে তো পরিস্থিতি ভিন্ন? যে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে হবে। কৌস্তভের কথায়, 'স্পষ্ট করতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা কংগ্রেস কর্মী একটা বিষয়ে জোটবদ্ধ যে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোট, আসন সমঝোতা, ভাব-ভালোবাসা আমাদের বড় না রয়েছে। দিল্লি চাপিয়ে দিলেও নির্বাচন করবে তো এখানকার কংগ্রেস কর্মীরা। তখন আমরা আমাদেরটা বুঝে নেব।'
জোট ঘিরে যখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে হাই-কমান্ড তখন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে চরম বিবাদ আরও চওড়া। প্রশ্নের মুখে বাংলায় হাত শিবিরের ভবিষ্যৎ।