শেষ কথা হয়েছে আজ, বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর ২টো ১০ মিনিটে। এক সরকারি নিরাপত্তা আধিকারিক মুর্শিদাবাদের গ্রামের বাড়িতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছিলেন সাদের সরকারকে। কথা হয়েছে সর্বসাকুল্যে মিনিট দুয়েক। কিন্তু তখনও জানা যায়নি কখন বাড়ি ফিরবেন সাদের। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় এখন প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। একই হাল বাকতার শেখের পরিবারেরও। এই দুই পরিবারের আত্মীয় স্বজন হাজির হয়েছেন তাঁদের গ্রামের বাড়িতে।
আপেল বাগানে ও চাষাবাদের কাজের জন্য ফি বছর কাশ্মীরে যান মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বাহালনগরের বাসিন্দারা। ১৪ বছর ধরে সাদের যাচ্ছেন সেখানে। মাঝে দু'বছর যাননি। এবার ২৪ দিন আগেই কুলগামে গিয়েছেন সাদের। তাঁর চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েই বিবাহিত। পুরো সংসারের ভার তাঁরই ওপর। কখন বাড়ি ফিরবেন সেই আশায় অপেক্ষা করছেন বাড়ির লোকেরা। তাঁরা চান না আর কখনও কাশ্মীরে গিয়ে কাজ করুক। এবার অন্তত প্রাণটা বাঁচুক। যা জোটার জুটবে, তবু এখানেই কাজ করবে।
শ্বশুরের বিপদের কথা শুনে বাড়িতে এসেছেন জামাই কালু শেখ। কালু বলেন, "এখনও শ্বশুরমশাই রয়েছেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব ওঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিক। জম্মুতে ট্রেন ধরিয়ে দিলেই হবে। শেষবার কথা হয়েছে এদিন দুপুর ২টো ১০ মিনিটে। কিন্তু তখনও জানা যায়নি কখন, কীভাবে ফিরবেন সাদের সরকার।" কাশ্মীরে পাঁচ শ্রমিককে হত্যার পর আতঙ্কিত সাগরদিঘির প্রত্য়ন্ত গ্রামের এই পরিবার।
সাদের সরকারের সঙ্গে সেখানে রয়েছেন ওই গ্রামের আর এক বাসিন্দা বাকতার শেখও। জানা গিয়েছে, তাঁদের দু'জনকে বুধবার নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রেখেছে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ-প্রশাসন। বাকতার শেখের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কথা হয়েছে বুধবার। তবে তিনিও জানাতে পারেননি কখন ফিরতে পারবেন নিজভূমে। বাকতার শেখের মেয়ে আদরি বিবি বলেন, "গতকাল, বুধবার বাবার সঙ্গে মায়ের কথা হয়েছে। বাবা পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছেন। আমরা চাইছি, বাবা দ্রুত ফিরে আসুক। ওখানে থাকুক তা একেবারেই চাইছি না। তবে এখনও আসার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস পাইনি।"
কাজের তাগিদে কাশ্মীরে গিয়ে এখনও প্রচুর মানুষ সেখানে আটকে রয়েছে। তাঁরা ফিরতে চাইছেন বাংলায়। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, "কাশ্মীরে শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, মালদা, বীরভূমের অনেকেই রয়েছেন। তাঁরা প্রথমবার সেখানে গিয়েছেন, এমনও নয়। তবে এই প্রথম সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটল। তাঁর প্রশ্ন, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কি করে এই হামলার ঘটনা ঘটলো?"