বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনা কেন ঘটল? করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে কি বড়সড় কোনও গোলমাল? এমনই সব প্রশ্ন তুলে দুই রেল আধিকারিকের কথপোকথনের অডিও ক্লিপ টুইটারে পোস্ট করে প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূলের কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। যা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফোন ট্যাপিংয়ের অভিযোগ তোলেন তিনি। মঙ্গলবার সেই অভিযোগের প্রক্ষিতেই বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ করেছেন কুণাল। হুঁশিয়ারি দিয়ে টুইটারে লিখেছেন, 'কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ো না দলবদলু CBI FIR named. ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখনি এখনও।'
কী লিখেছিলেন কুণাল?
শুক্রবার ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ তিন ট্রেন দুর্ঘটনার পরদিন শনিবার দুই রেল অফিসারের অডিও ক্লিপ টুইট করেছিলেন কুণাল ঘোষ। যা উস্কে দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে বড় গোলমালের ইঙ্গিত।
কুণাল ঘোষের পোস্ট করা অডিও ক্লিপে শোনা যায়, এক রেলকর্তা আরেক এক রেলকর্তাকে জানান, চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ভুল ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল মেইন লাইনের দিকে, আর পয়েন্টার ছিল লুপ লাইনের দিকে। এমনটা কেমন করে সম্ভব? প্রশ্ন করলেন আর এক রেলকর্তা। পাল্টা জবাব এল, স্থানীয় কর্মীরা কেউ গোলমাল করলেই এমন হতে পারে। দুই রেলকর্তার কথোপকথনে স্পষ্ট, সিগন্যাল–পয়েন্টারের গণ্ডগোলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অর্থাৎ, বাহানাগা স্টেশনের ঢোকার মুখে আপ এবং ডাউনের পাশাপাশি দু’টি অতিরিক্ত লাইন রয়েছে। এই জোড়া লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’টি মালগাড়ি। এমন জায়গায় পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন ট্র্যাক বদল করে। করমণ্ডলের চালক সবুজ সিগন্যাল পেয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেন ছোটান। কিন্তু ট্র্যাক বদলের সংযোগস্থলের পয়েন্ট থেকে যায় লুপ লাইনে। তাই দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে করমণ্ডল। ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রান যায় পৌনে তিন'শ মানুষের।
পাল্টা কী দাবি শুভেন্দুর?
সোমবার কুণাল ঘোষের টুইটের বিষয়বস্তু সম্পর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, 'তৃণমূলের মুখপাত্র কীভাবে পেলেন অডিও ক্লিপ, সেটাও তদন্তের আওতায় আনা উচিত। রেলের দুই আধিকারিকের কথোপকথন তাঁরা কেউ রেকর্ড করেননি। ফোন ট্যাপ করে সেই কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে, এটাও তদন্তের আওতায় রাখা উচিত।'
শুভেন্দুর প্রশ্নের জবাব কুণালের-
কুণাল ঘোষের প্রকাশ্যে আনা দুই রেল অফিসারের কথোপকথনের অডিও তদন্তের আওতায় আনার দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। যার জবাবে কুণাল ঘোষ এদিন বিরোধী দলনেতাকে হুমকির সুরে টুইট করেছেন। লিখেছেন, 'আমি দুই রেল অফিসারের অডিও ক্লিপ টুইট করেছি। বেশ করেছি। তদন্ত হলে বুঝে নেব। কিন্তু শুভেন্দু তো কেন্দ্রের সরকারের জোরে সব ফোন, কল রেকর্ডের কথা বলে বেড়ায়। এই পেগাসাস অধিকারী গ্রেপ্তার হবে না কেন? কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ো না দলবদলু CBI FIR named. ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখনি এখনও।'
অর্থাৎ বিজেপি পরিচালিক কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেই পেগাসাসের মত প্রযুক্তির সহায়তায় বিরোধীদের ফোন ট্যাপের অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। নিজের দাবি পোক্ত করতে একুশ সালের জুলাই মাসের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। যেখানে দেখা যাচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'একটা বাচ্চা ছেলে এখানে এসপি হয়ে এসেছে৷ আমি পুরোন খেলোয়ার৷ তাঁর উদ্দেশে বলতে চাই আপনি কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসার৷ এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে কাশ্মীরের অনন্তনাগ বা বারামুলায় গিয়ে ডিউটি করতে হয়৷ সাবধানে চলুন, ভদ্রভাবে চলুন৷ ভাইপোর অফিস থেকে কারা ফোন করছেন, সবটাই জানা আছে৷ তাঁদের প্রত্যেকের কল রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে৷ আপনাদের কাছে রাজ্য সরকার থাকলে আমাদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকার আছে।' এই হুমকির প্রেক্ষিতেই তমলুক থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে পুলিশ৷