Kunal Ghosh Resig From All Positions Of TMC: শুক্রবার সকালে দলের 'স্বার্থপর' নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। তবে কে বা কারা ওই তালিকায় রয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি। তখন থেকেই জল্পনার পারদ চড়ছিল। বিকেলে হতেই ফের বোমা। ঘোষণা করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র পদে আর তিনি থাকতে চাইছেন না! দলে 'মিসফিট' তিনি। কাজ চালানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাঁর দলবদলের চর্চা উড়িয়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। দাবি করেছেন, তিনি তৃণমূলের থাকছেন, তবে একজন সৈনিক হিসাবে।
এরপরও থামেননি কুণাল। সন্ধ্যার মুখে আরও একটি এক্স পোস্টে লিখেছেন, 'নরেন্দ্র মোদি বাংলার মাটিতে একরাশ কুৎসা করে গেলেন। যুক্তিতে তাঁকে ধুয়ে দেওয়া যায়।কিন্তু ঘটনা হল তাঁর কড়া সমালোচনার মূল দায়িত্ব যাঁদের, দুটি আলাদা বিরোধী দলের লোকসভার দলনেতারা তো প্রধানমন্ত্রীরই লোক। এঁদের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ। এই দুজনকে দুভাবে ব্যবহার করেন মোদি। একজনকে রোজ ভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে গলায় বকলস পরিয়ে রেখেছেন।'
কুণাল ঘোষের নিশানায় আসলে তৃণমূলের কে বা কারা? পরে সংবাদ মাধ্যমে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জোড়া-ফুলের অন্দরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ট বলে পরিচিত এই নেতা।
কেন দলীয় সংগঠনের দুই পদ থেকে ইস্তফা?
কুণাল ঘোষের দাবি, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সেনাপতি। কিন্তু এই দুই পদ আমি থাকতে চাইছি না, ভেবেচিন্তে মনস্থির করে আমি নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। মিসফিট বলে মনে হচ্ছে। দলে আমি খাপ খাওয়াতে পারছি না। আমি এমন কোনও নেতা নই যে তার জন্য এটা নিয়ে আলোচনা হবে। তার থেকে সরে থাকা ভাল। আমি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি অনুরোধের জন্য বসে আছি সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যে জায়গাটা উপভোগ করতে পারছি না। কোথাও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা থাকছে। সেটা আমি বইব কেন। আমার নেতা তো দিদিই থাকছেন, অভিষেকই থাকছেন। অভিষেককে শুধু আমি নেতা হিসেবে সম্মান করি না, আই লাভ অভিষেক।'
কেন এক ক্ষুব্ধ কুণাল?
উত্তর কলকাতা তৃণমূলের সাংগঠনিক সভায় আমন্ত্রণ করা হয়নি কুণাল ঘোষকে। সেটাই কি আগুনে ঘি ঢালল? জবাবে বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ। সরাসরি নিশানা করলেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। কেন মৌলালীর ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলের মধ্যে একটি ফ্ল্য়াটে সুদীপবাবু দলীয় অফিস চলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কুণাল। বলেন, 'ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে জেলা সভাপতি ফ্ল্যাট দখল করে আছে। অফিসটা স্কুলের মধ্যে। ওঁকে নাকি কোন মিশনারিজ অনুমতি দিয়েছে। ওটা তো জেলা অফিস হতে পারে না। কেন স্কুলের মধ্যে রাজনীতির আখড়া হবে?'
'সুদীপ শেখ শাহজাহান!'
কেন তাঁকে আমন্ত্রণ নয়? কুণাল ঘোষের জবাব, 'আমায় দেখতে খারাপ, তাই ডাকেনি! ওঁকে (সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) দেখতে ভাল। উনি বড়সড় শেখ শাহজাহান। গালে দাড়ি আছে। সন্দেশখালির শাহজাহানের বিষয়ে এত দিন কিছু জানা যায়নি বলে বলা হচ্ছিল। কিন্তু উত্তর কলকাতার শাহজাহান কী করছেন, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন। দল জমিদারি হটানোর স্লোগান দিচ্ছে। আর কেউ কেউ পার্টিটাকে বাপের জমিদারি ভাবছে। পার্টির একটা কাঠামো রয়েছে। তা মেনেই সকলের চলা উচিত।'
'উত্তর কলকাতায় এবার পদ্মফুল বনাম পদ্মফুলের লড়াই!'
দলের সাংসদকে শুধুমাত্র শেখ শাহজাহানের সঙ্গে তুলনা করেই থামেননি। আরও বড় অভিযোগ করেছেন তৃণমূলে সদ্য পদত্যাগী মুখপাত্র। কুণাল ঘোষের অভিযোগ, 'সব জায়গায় বিজেপি বনাম তৃণমূল। একমাত্র উত্তর কলকাতায় বিজেপির দুই প্রার্থী। একজন বিজেপির প্রতীকে ভোটে দাঁড়াবেন, আরেকজন লড়বেন জোড়াফুল প্রতীকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির লোক, উনি হাওয়া বুঝে সেই দিকে যান। সুদীপবাবুর সচিবের ছেলে বিজেপি নেতা।'
কুণালের বক্তব্য, 'সুদীপদা তাঁর সচিবের পুত্রকে বিজেপিতে রেখে দিয়েছেন। তাঁর বাড়িতেই থাকেন উনি। এই ব্যক্তি তাহলে কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন?'
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার অন্তর্গত চৌরঙ্গী বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। ওই বিধানসভা এলাকার মধ্যে দু'টি ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ তুলে কুণাল বলেছেন, ' নিজেদের এলাকায় দু'টো ওয়ার্ড জেতাতে পারে না, জেলা সামলাতে গিয়েছে।'