শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলার পরই পেশায় শিক্ষক কুড়মি আন্দোলনের নেতা রাজেশ মাহাতো গ্রেফতার। এবার তাঁর বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল। গ্রেফতার করা হল এই কুড়মি নেতাকে। তাঁর সঙ্গেই অভিষেকের কনভয় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাকেশ মাহাতো, শিবাজি মাহাতো-সহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, খুনের চেষ্টা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, সরকারি কর্মীদের মারধর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা-সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ৬টি-সহ মোট ১৪টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে শনিবারই এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল চার জন অনুপ মাহাতো, অজিত মাহাতো, অমিত মাহাতো ও মনপ্রীত মাহাতোকে। ফলে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলার ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হল। সব মিলিয়ে মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
তাঁর কনভয়ে হামলার ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'এর পিছনে কারা রয়েছে আমরা সব জানি। গুন্ডামি করে কোনও আন্দোলন হয় না। আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে করতে হয়। এর পিছনের কারা আছে, আমরা খুঁজে বের করব। কুড়মি নেতাদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে যে, হামলার ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ আছে কি না। যারা হামলা করেছে, আমি তাদের সবাইকে চিহ্নিত করেছি।'
রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, '১২-১৪ জন লোক আহত হয়েছেন। রাজেশ মাহাতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর কাছে জবাব চাই। জিজ্ঞাসা করি, দাদা এটা কী হল? এটা তোমাদের কী ধরনের আন্দোলন?' বীরবাহার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজেশ মাহাতো বলেছিলেন, 'এই ঘটনার সঙ্গে কুড়মি সমাজের কোনও যোগ নেই।'
রাজেশ মাহাত অভিষেকের কনভয়ে হামলার সঙ্গে কুড়মি সম্প্রদায়ের যোগ থাকার কথা অস্বীকার করলেও প্রশাসন অবশ্য সেকথা বিশ্বাস করেনি। পেশায় স্কুলশিক্ষক রাজেশ মাহাতো পড়াতেন খড়গপুরে বানাপুর স্কুলে। সেখান থেকে তাঁকে তড়িঘড়ি কোচবিহারের চামটা আদর্শ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। স্কুলশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কারণ এবং শিক্ষার স্বার্থে এই বদলি করা হয়েছে।
কিন্তু, তারপরও সবকিছু ছাপিয়ে নয়াগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় রাজেশ মাহাতোকে। সংগঠনের নেতা রাজেশ মাহাতোর গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কুড়মি সমাজ। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজেশ মাহাতোর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
আরও পড়ুন- শালবনিতে কনভয়ে হামলায় অভিষেকের নিশানায় কারা? কী বললেন কুড়মিদের শীর্ষ নেতা?
ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার? শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় আসার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ঝাড়গ্রামের গড় শালবনিতে জমায়েত করেছিলেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। বিকেলে তাঁরা প্রায় ৪০ মিনিট রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। তার মধ্যেই সন্ধ্যায় দহিজুড়ির কর্মসূচি শেষ করে লোধাশুলির দিকে কনভয় ও তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে আসছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের ওপর অভিষেকের গাড়ি চলে যেতেই শুরু হয়েছিল ইটবৃষ্টি। মারধর করা হয়েছিল কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে। কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম থানার আইসি-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী।