/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/12/labandahara-gram-ausgram-east-burdwan.jpg)
গ্রামের প্রায় সব বাড়ির দেওয়ালেই আদিবাসী মেয়েরা ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পকর্ম। ছবি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
এ যেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রভাবধন্য একটা গ্রাম। বাংলার এই গ্রামের আদিবাসী রমণীরা শুধু নিজেরাই সাজেন না। নিজেদের ঘর, গৃহস্থালিও সাজাতে ভালোবাসেন। তাই হয়তো কারুর কাছে ’ছবির গ্রাম’, আবার কারুর কাছে 'আলপনার গ্রাম' হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের লবনধারা গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি মাটির বাড়ির দেওয়ালে শোভা পাওয়া আদিবাসী রমণীদের আঁকা ছবি দেখতে
দুর দূরান্তের মানুষজন ভিড় জমান। ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা লবনধারা গ্রামের আদিবাসী রমণীদের প্রশংসায় ভরিয়ে দেন।
লবনধারা গ্রামকে নিয়ে নানা লোককাহিনী এলাকাবাসীর মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। এলাকার প্রবীণদের কথায় প্রায় তিনশো বছর আগে আউশগ্রামের দেবশালা অঞ্চলের 'বড়ডোবার’ তীরে জঙ্গল আবৃত গা ছম ছমে জায়গায় ছিল বিশাল একটি বটগাছ। চিল আর পায়রা ওই গাছে আশ্রয় নিত। ওই ডোবাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে আদিবাসী পাড়াটি। এও শোনা যায়,সত্তরের দশকে এখানকার জঙ্গল মহল হয়ে উঠেছিল নকশালদের আস্তানা। এখানকার নকশালদের দাপটের বিষয়টি ওই সময়ে রাজ্যে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। নকশালদের প্রভাব থেকে আউশগ্রামের বেনাচাপড়াও বাদ পড়েনি। নকশাল আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে সেই সময়ে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার বড়ডোবা তীরবর্তী জায়গায় চলে এসে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সেখানেই গড়ে ওঠে নতুন একটি আদিবাসী গ্রাম। তবে গ্রামটি নতুনগ্রাম নামে পরিচিতি পায়নি। লোকমুখেই গ্রামটি লবনধারা নামে পরিচিতি। আজও সেই নামেই পরিচিত আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামটি।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লবনধারা গ্রাম সমাদর পেয়েছে ছবির গ্রাম হিসাবে। গ্রামের আদিবাসী রমণীদের হাতের শিল্প সুষমায় চারদিকে শোভা পাচ্ছে তাঁদের আাঁকা শিল্প কারুকার্য। এই শিল্প কারুকার্যের দৌলতেই লবনধারা গ্রামের নাম এখন দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলেন 'ছবির গ্রাম', আবার কারুর কাছে 'আলপনা গ্রাম' হিসাবেই পরিচিতি লবনধারা-র।
কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব হল? এর উত্তরে এলাকাবাসীরা জানালেন, যুগ যুগ ধরে আদিবাসী পরিবারের রমণীদের মধ্যে রয়ে গেছে ঘর গৃরস্থালি সাজিয়ে তোলার একটা পরম্পরা। ঘরের সৌন্দর্যের প্রতি আদিবাসী রমণীদের আলাদা একটা প্রীতিও রয়েছে। শত দুঃখ-কষ্ট বা অভাব অনটনের মধ্যেও সেটা তাঁরা ভোলে না। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা তাঁদের ঘর গৃহস্থালি সাজতে ভালবাসেন। সেই পরম্পরা লবনধারা গ্রামের আদিবাসী রমণীরা ধরে রাখাতেই এই গ্রাম এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি আদিবাসী বাড়িতেই তার নিদর্শন পাওয়া যায়। শুধু গৃহস্থালী নয় ,গ্রামে ঘুরলে চোখে পড়বে গ্রামের মনসা মন্দিরে আাঁকা রয়েছে সাপের ছবি। তেমনি কোথাও আবার আছে রাধাকৃষ্ণের ছবি,পশুপাখি, মাছ ইত্যাদি। এইসব ছাড়াও আছে প্রকৃতি বা মানুষকে নিয়ে নানা চিত্রকল্প। যা সবাইকেই মুগ্ধ করে।
এইসব দেখে উৎসাহিত হয়ে বোলপুরের পেশাদার শিল্পীরা এসে আরও কিছু চিত্র এঁকেছেন ওই গ্রামে। দেওয়াল চিত্র ঘিরেই লবনধারা গ্রাম যেন এখন পর্যটনের নতুন একটা ঠিকানা হয়ে উঠছে। এলাকার বাসিন্দা অর্চনা রায়, গোপীজীবন মেটেরা চাইছেন, দেওয়াল চিত্রকে আাঁকড়েই বোলপুর সন্নিকটে থাকা রবীন্দ্রনাথের প্রভাবধন্য তাঁদের লবনধারা গ্রাম গোটা বাংলা জুড়ে আরো পরিচিতি পাক।