নিউ টাউনের আইনজীবী রজত দে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত স্ত্রী অনিন্দিতাকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করলেন তদন্তকারী অফিসাররা। পুলিশি জেরায় অনিন্দিতা যেভাবে তাঁর স্বামীকে খুন করার কথা বলেছিলেন, তা এদিন খতিয়ে দেখা হয়। পুনর্নির্মাণের জন্য মোবাইল চার্জার, চাদর ও হাউস কোট সঙ্গে করেনিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনিন্দিতা কীভাবে চাদরের সঙ্গে মোবাইল চার্জার এর তার পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করেছিলেন, তা অভিনয় করে দেখান। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ।
গত ২৬ নভেম্বর নিউটাউনের বিবি ব্লকের একটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দের নিথর দেহ। রজতের স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে প্রথমে জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন তিনি স্বামীকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। গায়ে হাত দিয়ে ডাকার পর পড়ে যান রজত। পরে বয়ান বদলে তিনি বলেন, বিছানার চাদর গলায় জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। অনিন্দিতার বয়ান বদলে সংশয়ে পড়েন তদন্তকারী অফিসাররা। এর পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসতেই ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড় নেয়। গ্রেফতার করা হয় আইনজীবীর স্ত্রী অনিন্দিতা পাল কে, যিনি নিজেও পেশায় আইনজীবী। তাঁকে বারাসাত আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রথমে তাঁকে ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের অনিন্দিতাকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।সেই সময়সীমা আজ রবিবার শেষ হতে চলেছে। তার আগে শনিবার তাঁকে ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। আজ রবিবার তাঁকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন, দুর্নীতির দহে পড়ে বদলে যাচ্ছে কাঁসাই শিলাবতী নদীরা
এই ঘটনায় খুনের মোটিভ কী ছিল তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশ কাছে। তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, অনিন্দিতার একার পক্ষে রজতকে খুন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তির সন্ধান পেতে পুলিশ একাধিক ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে এখনও এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। তদন্তকারীদের একাংশের অবশ্য ধারণা, এই খুন অনিন্দিতা একাই করেছে।
মনে করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে রজত যখন খাটে বসে ছিল সেই সময়ে পিছন থেকে চাদর দিয়ে মোবাইলের চার্জার কর্ড দিয়ে গলায় জড়িয়ে টান দেওয়া হয়। তখনই নিচে পড়ে যান রজত। সেই কারণে রজতের মাথায় ও দুই হাতের কনুইয়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। পুলিশ সূত্রে আরো জানা গিয়েছে, কী ভাবে স্বামী রজতকে খুন করা হবে, কী ভাবে খুন করলে সহজেই পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া যাবে, তদন্ত প্রভাবিত করা যাবে এবং সহজে রেহাই পাওয়া যাবে সেই সংক্রান্ত বইও পড়েন অনিন্দিতা। বেশ কিছুদিন ধরে অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে রিসার্চ করছিলেন অনিন্দিতা, এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। রজত খুনের পর সে জন্যেই প্রথম থেকে তদন্তকারীদের ঘোল খাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি, বলছে একটি সূত্র।