রাত পোহালেই লক্ষ্মী পুজো। লক্ষ্মীপুজোয় বাজার দর আকাশ ছোঁয়া, আগুন ফুল-মালা-মিষ্টি-প্রতিমাও। সব মিলিয়ে পুজোর আয়োজনে রীতিমত নাস্তানাবুদ খেতে হচ্ছে আম-আদমি কে। পুজোর রেশ না কাটায় সবজি থেকে ফুল-ফল-মিষ্টির দাম আকাশছোঁয়া। দাম বেড়েছে প্রতিমারও।
চলতি বছর ৮ই অক্টোবর রাত ৩টে ২৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৯ অক্টোবর রাত ২টো ২৫ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত পূর্ণিমা তিথি থাকবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এদিকে পুজোর আগেই আমজনতার নাভিশ্বাস বাড়িয়ে উৎসবের মরসুমে পুজোর বাজার আগুন। সবজি থেকে শুরু করে ফলের বাজার হাত ছোঁয়ালেই ছ্যাঁকা খাচ্ছেন আমজনতা, আগুন দাম ফুল এবং ঠাকুরও। লক্ষ্মীপুজোর আগেই এভাবে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জো মধ্যবিত্ত বাঙালির। সবজী-ফলের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঠাকুরের দাম। গত বারের থেকে ছোট এবং প্রমাণ সাইজের ঠাকুরের দাম বেড়েছে। এসবের মধ্যেই চলছে বাঙালির লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন।
উৎসবের মরশুমে বাজার করতে গিয়ে ছ্যাঁকা খাওয়ার জোগাড় উৎসবপ্রিয় বাঙালির। পুজোর আগে বৃষ্টির কারণে এবছরের পুজোতেও সবজি এবং ফলের বাজার অগ্নিমূল্য। সেই ছোঁয়া রয়েছে লক্ষ্মীপুজোতেও। কলকাতার একাধিক জনপ্রিয় বাজারে সব্জি-ফলের দাম আকাশছোঁয়া ।
আলু (চন্দ্রমুখী) ৪০-৪৫টাকা, জ্যোতি আলু ২৮-৩০ টাকা প্রতি কিলো টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা। ফুলকপি জোড়া (ছোট) ৫০ টাকা, ফুলকপি জোড়া (বড়) ১০০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, গাজর, ১০০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৩০ টাকা কিলো, ঝিঙে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, শসা ৪০ টাকা, পাতি লেবু ৩ থেকে ৫ টাকা প্রতি পিস, আদা কেজি ২২০ টাকা, লঙ্কা কেজি ১২০ টাকা, সিম ১০০ টাকা, বিনস ১২০ টাকা। ফলের মধ্যে আপেল ১০০ টাকা কেজি। কমলালেবু এবং মুসম্বি লেবু পার পিস ২০ টাকা করে। ন্যাসপাতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি, পেয়ারা ১২০-১৪০ টাকা করে কিলো। আঙুর ২৪০ টাকা। বেদানা ১৮০ টাকা, পানিফল ১০০ টাকা, মর্তমান কলা ১ ডজন ৬৫ টাকা, কাঁটালি কলা ১ ডজন ৪০ টাকা। আবার এক পিস নারকেলের দাম ৫০ থেকে ৬০ যা কিনতে গিয়ে কাল ঘাম ছুটছে সকলের। ফল ও শাকসবজির দামও এই দিন বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে হেঁকেছেন।
মাছ বাজারও অগ্নিমূল্য। রুই প্রতি কিলো ১৮০ টাকা (গোটা), রুই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা (কাটা), কাতলা প্রতি কিলো ২০০-২২০ টাকা (গোটা) কাতলা প্রতি কিলো ৩৫০-৪০০ টাকা (কাটা), ভেটকি প্রতি কিলো ৬০০ টাকা, ইলিশ (১কেজি) ১২০০-১৫০০ টাকা কিলো, তেলাপিয়া প্রতি কিলো ১৮০-২০০ টাকা, ভোলা প্রতি কিলো ২০০ টাকা, ট্যাংরা ৪০০-৪৫০ টাকা কিলো, মৌরোলা ৩০০ টাকা কিলো।
এ দিন কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাজারে মাঝারি সাইজের লক্ষ্মী প্রতিমা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। একটু ছোট সাইজের লক্ষ্মী প্রতিমার দাম ৯০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। একটু বড় সাইজের লক্ষ্মী প্রতিমা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এদিন বাজারে লক্ষ্মীর বড় সরার দাম ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। লক্ষ্মীর ছোট সরার দাম ৬০ থেকে ৯০ টাকার আশেপাশে। ডাকের সাজের প্রতিমার দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু। বারোয়ারি পুজোর প্রতিমার দাম শুরুই হচ্ছে ১,৫০০ টাকা থেকে।
করোনা কালে গত বছর সেভাবে ব্যবসা হয়নি প্রতিমা বিক্রেতাদের। এবারের ধনদেবী মুখ তুলে তাকাবেন এই আশায় ঠাকুর তুলেছিলেন প্রতিমা বিক্রেতা পলাশ পাল, তার কথায়, ‘গত বছর করোনা আবহে সেভাবে ব্যবসা হয়নি, এবারে বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় প্রায় ২৫০ মতো ঠাকুর তুলেছি বিক্রির জন্য, গত বছরের থেকে প্রতিমার দাম খানিক চড়া, প্রতিমার সাজ-সজ্জার দাম বেড়েছে। তবে এই একটা দিন ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো। চলতি বছর ভাল ব্যবসার আশা করছি”।
কয়েক বছর যাবৎ লক্ষ্মীপুজোর সময়ে বহু পরিবারের লোকজনই বাড়িতে তৈরি করার বিভিন্ন অসুবিধে থাকায় বাজার থেকে নারকেল ও তিলের নাড়ু, মুড়ি ও খইয়ের মোয়ার প্যাকেট কেনেন। দাম বেশি হলেও সে সবের বিক্রি অনেকটাই বেড়েছে। ফলে, দাম চড়েছে প্যাকেটবন্দি নাড়ু, মোয়ারও। এক পিস নারকেল নাড়ু বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকার দামে।
রজনী থেকে শুরু করে গেঁদার মালা বিকোচ্ছে চড়া দামেই। বাজারে মাঝারি সাইজের রজনীগন্ধা মালা বিকোচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে, একটু বড় মালা ১৫০ টাকা। প্রমাণ সাইজের জোড়া গাঁদাফুলের মালা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। একপিস মাঝারি মানের পদ্মের দাম ২৫ টাকা। ভাল পদ্ম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি পিস। ফুল বিক্রেতা স্বপন দাসের কথায়, “এখন টানা পুজোর মরশুম চলছে এমনিতেই বাজার চড়ে থাকে,আর লক্ষ্মী পুজো বলে কথা একটু বাজার না উঠলে উপায় নেই”৷
মিষ্টি ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। সেখানেও হাত ছোঁয়াতে গেলে ছ্যাঁকা খাচ্ছে বাঙালি। সন্দেশের দাম শুরুই হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা প্রতি পিস। মিষ্টি দই কিলো ২২০ টাকা। টক দই ১৮০-২০০ টাকা। লাগামছাড়া দাম, পকেটে ছ্যাঁকা খেয়েও ধনদেবীর আরাধনায় কোনও খামতি রাখতে নারাজ উৎসব প্রিয় বাঙালি।