বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় উৎসুক সকলে এক এক করে থানা চত্বর থেকে ফিরে গেলেন বাড়ী।অধিকাংশই জড়ো হয়েছিলেন বিশেষ একজনকে দেখতে। না, কোন আসামী কিংবা নেতা কিংবা তারকা নন ইনি। কিন্তু এলাকায় খবর চাউর হতেই মুহুর্তে তারকাদের ছাপিয়ে গিয়েছেন। কে তিনি?
কথায় বলে, চেহারায় নাকি কিছু এসে যায় না। তা একবারে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমান করেই ছাড়লেন বাইরে থেকে দেখতে কদাকার, মেরেকেটে এক ফুট উচ্চতারও কম, বুকে হেঁটে চলা এক লুপ্তপ্রায় বিরল প্রজাতির প্রাণী। পোশাকী নাম 'তক্ষক'। যার আন্তর্জাতিক মূল্য ৯ কোটি ছুঁয়েছে। যা শুনে আম জনতার পাশাপাশি রীতিমত চোখ কপালে উঠেছে খোদ মুর্শিদাবাদের পুলিশ থেকে বন দপ্তরের তাবড় তাবড় কর্তাদেরও।
ভারত হয়ে চীনে চোরাপথে পাচারের আগেই ফারাক্কার ধোসা ঘাট এলাকায় পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিরল প্রজাতির ওই ছোট্ট প্রাণীটি। সাথে গ্রেপ্তার হয় আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচার কাজে যুক্ত মহম্মদ ইসাও। ধৃতকে শনিবার ম্যারাথন জেরার জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন চেয়ে তোলা হবে বলে জানা যায় । এই ব্যাপারে থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ জানান, "ওই পাচারকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার গ্যাং-এ আর কে বা কারা জড়িত আছে আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী চোরা চালানের সঙ্গে, তা জানারই চেষ্টা করছি এখন।"
দাম শুনে চোখ কপালে উঠছে সরকারি অফিসারদেরও
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার আগেই নির্দিষ্ট খবর পেয়ে ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে সেই মত টিম সাজিয়ে ফারাক্কা এলাকার ধোসা ঘাট নদী চত্বরে পৌঁছায় পুলিশ। সেখান থেকেই পাকড়াও হয় মালদা জেলার কালিয়াচক থানার পশ্চিম কাশচাঁদপুর এলাকার বছর তেইশের যুবক ইসা শেখ। তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার ওই ৯ কোটি টাকা মূল্যের বিরল প্রজাতির তক্ষকটি। ধৃত ইসা পুলিশকে জানায়, লম্বায় সাত ইঞ্চি ও প্রায় ২৭৫ গ্রাম ওজনের প্রাণীটিকে বাংলাদেশ-মায়ানমার হয়ে মুর্শিদাবাদ মারফৎ চীনে ৯ কোটি টাকায় চোরা কারবারীদের মাধ্যমে বিক্রির 'ডিল' হয়েছিল। তবে তার আগেই এই বিলুপ্তপ্রায় ধূসর রঙের তক্ষকটি উদ্ধার করতে সমর্থ হয় পুলিশ।
পরে তক্ষকটির শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে খবর দেওয়া হয় স্থানীয় বাগদামারা বিট অফিসে। সেখানকার বনকর্মী প্রভাস চন্দ্র মন্ডল ওই বিরল প্রাণীটিকে খুঁটিয়ে দেখেন এবং জানান, "প্রাণীটিকে আগে শারীরিকভাবে সুস্থ করে পরে বনে ছেড়ে দেওয়া হবে।"
ওই বিরল প্রাণী দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আলম শেখ বলেন, "এত দামের প্রাণী কোনওদিন স্বপ্নেও দেখি নি, তাই থানায় ধরা পড়েছে শুনে দেখতে এসেছি। সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ায় ফিরে গেলাম, সকালে আবার আসবো।"