লাল সুতোয় গেরোয় আটকে ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের শতাব্দী প্রাচীন গাছ কাটার কাজ। গাছের বিপজ্জনক ডাল ভেঙে পড়ে প্রায়ই দূর্ঘটনার ঘটছে। রবিবার দুপুরে রাস্তার পাশের একটি মুরগির মাংসের দোকানের উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিপত্তি ঘটে। দোকানের মধ্যে চাপা পড়ে দোকান মালিক ও এক ক্রেতার মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও দুই জন। রবিবার দুপুর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম রতন মণ্ডল (৪৭) ও স্নেহাশিস বিশ্বাস (৪২)। রতন চাঁদপাড়ার ও স্নেহাশিস গোপরাজাপুরের বাসিন্দা। এদিন ছেলেকে নিয়ে মাংস কিনতে রতনদের দোকানে এসেছিলেন স্নেহাশিস। প্রতিবাদে গাইঘাটায় বিডিও অফিসে সামনে যশোর রোডে অবরোধ করেন স্থানীয়রা। গাছের ডাল কাটার দাবি তোলেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এদিন চাঁদপাড়ায় গাইঘাটা বিডিও অফিসের পাশে নিজের মাংসের দোকানে কাজ করছিলেন রতন। দুপুর নাগাদ হঠাৎই একটি শিরিশ গাছের একটি বড় ডাল ভেঙে পড়ে দোকানের উপর। ফলে ভেঙে গুড়িয়ে যায় দোকান ঘরটি। দোকান ঘরের নিচে চাপা পড়ে যান রতন ও ক্রেতা স্নেহাশিস বিশ্বাস। ডালের আঘাতে আহত হন আরও দুজন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা ছুটে এসে জেসিবি ডেকে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে আসে গাইঘাটা থানার পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠালে ডাক্তার রতন ও স্নেহাশিসকে মৃত বলে ঘোষণা করে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে বিডিও অফিসের সামনে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়রা। অবরোধকারীরা জানান, "প্রাচীন এই গাছগুলি বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ঝড়বৃষ্টিতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকে মারাও গিয়েছেন।" তাঁদের দাবি, "এই সপ্তাহে গাছের ডাল ভেঙে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।"
বিক্ষোভকারীরা এদিন মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন এবং অবিলম্বে বিপজ্জনক গাছ কাটার দাবি করেন। বিক্ষোভের জেরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় যশোর রোডে। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ চলার পর ঘটনা স্থলে আসেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস, বিডিও এবং গাইঘাটা থানার ওসি। তাঁরা কথা বলেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। গোপাল শেঠ মৃত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং বিপজ্জনক গাছের ডাল কাটার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় অবরোধকারীরা।
গোপালবাবু বলেন, "অবরোধকারী আমিও। এই অবরোধে আমিও নৈতিক সমর্থন করছি। অবিলম্বে এর সমাধান হওয়া দরকার। মানুষের মৃত্যু নিয়ে খেলা করা চলবে না। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কোর্টকে মান্যতা দিয়ে যাতে বিপজ্জনক গাছের ডালগুলো কেটে ফেলা হয়। গাছ কাটার জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করব।" তিনি আরও বলেন, "মৃতদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু মৃতদের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় তার জন্য চেষ্টা করব। এবং আমাদের তহবিল থেকে সাহায্য করব।"