করোনা আবহে রাজ্য সরকারের বিনামূল্যে ছ'মাস চাল সরবরাহের ঘোষণাই সামনে এনে দিল এক ভয়ঙ্কর ছবি। পুরুলিয়া জেলার ঝালদার একাধিক গ্রামে মহাজনদের কাছে বন্ধক রয়েছে গরীব মানুষের রেশন কার্ড। ফলে, লকডাউনে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন আদিবাসী পরিবারগুলো। খাবার না পেয়ে স্থানীয় বিডিও-র দ্বারস্থ হয় পরিবারগুলো। সব শুনে আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম সরকারি আধিকারিকদের। গোটা বিষয়টিই তাঁদের কাছে অন্ধকারে ছিল বলে দাবি করেন ঝালদার বিডিও। পরে, মহাজনদের থেকে জমা হওয়া গরীব মানুষগুলোর রেশন কার্ড উদ্ধার করে প্রশাসন। আপাতত, ওই কার্ডের বিনিময়েই সরকারি সুবিধা পেয়েছেন ঝালদার সুরজমাতা গ্রামের দিন আনি-দিন খাই মানুষগুলো।
রেশন কার্ড কেন মহাজনদের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছিল? সুরজমাতা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৮০-র বৃদ্ধ গৌড় কালিন্দী বলেন, '১০ বছর আগে স্ত্রীর চচিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। ওই টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড মহাজনের কাছে জমা রেখেছি।' একই গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা রাধিকা কালিন্দীর কথায়, 'সাত হাজার টাকার পরিবর্তে চার বছর আগে রেশন কার্ড মহাজনকে দিয়েছিলাম। কিন্তু, লকডাউনে কাজ বন্ধ। সরকারও চাল, আটা দিচ্ছে বলে শুনেছি। তাই এখন কার্ডগুলো ফেরত চাইছি।'
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে যে, সুরজমাতা গ্রামে দেড়শ পরিবারের বাস। এর মধ্যে ২৪টি পরিবার সরকারি সুবিধার কথা জানতে পেরে পুরো ঘটনার কথা বিডিও-র দফতরে জানান। ঝালদার বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস গরীব মানুষগুলোকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেন। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। রেশন কার্ড উদ্ধার হলেও মহাজনদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে দু'তরফেই লিখিত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিডিও।
এই প্রসঙ্গে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, 'ঘটনা জানতে পেরে আমি হতবাক হয়েছি। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছি। এই ঘটনা যাতে কোথাউ না ঘটে তাই সব গ্রাম খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।' অভিযুক্ত মহাজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায় করার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, রেশন কার্ড অহস্তান্তরযোগ্য।
আরও পড়ুন- রাজ্যে নয়া করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র, বিশেষ নজর মালদা-মুর্শিদাবাদে
পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, 'লকডাউন না হলে এত ভয়ঙ্কর তথ্য সামনেই আসত না।' শুধু সুরজমাতা গ্রামই নয়, এক ছবি আদিবাসী অধ্যুষিত ঝালদার জোরগোড়া, কুলাবাহল গ্রামের বহু পরিবারেরও।
তবে, প্রশাসনের এই সক্রিয়তায় অসন্তুষ্ট মহাজনরা। সুরজমাতা গ্রামের মহাজনের স্ত্রী রাসু মাহাতো বলেন, 'পরিবারগুলো আমাদের থেকে ঋণ নিয়েছিল। পরিবর্তে রেশন কার্ড জনা রেখেছিল। পুলিশ কার্ডগুলো নিয়ে গেল কিন্তু টাকা ফেরতের কোনও কথা বলেনি। আমাদের টাকাগুলোর কী হবে? আমার প্রস্তাব ছিল, ওইসব কার্ডের বিনিময়ে যে চাল, আটা মিলবে তা সমানভাগে ভাগ করে আমাদেরও দেওয়া হোক। কিন্তু, পুলিশ তা মানেনি।'
জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কথায়, 'যাতে কেউ অভুক্ত না থাকেন তার চেষ্টা সবসময় করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলার ২০ ব্লকে জিআইএস ম্যাপিং করা হয়েছে। যাযাবর, আদিবাসী সহ বড় গরীব পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। ফোনে বা সাপ্রাইস ভিজিটের মাধ্যমে খোঁজ খবর করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই খোঁজ নেওয়া হয় এইসব পরিবারের।'
ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া পুলিয়ার ১৮০ কিমি সিল করা হয়েছে। জেলা শাসক জানিয়েছেন, '১৯,৭০০ মানুষকে গৃহনজরদারিতে রাখা হয়। এর মধ্যে ১৮,২০০ জন সুস্থ। জেলায় ৩৯ কোয়ান্টাইন কেন্দ্রে ৫৫৪ জন রয়েছেন। ৩,৫০০ আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রয়েছে।'
Read full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন