করোনা পরিস্থিতিতে বাংলায় লকডাউন নিশ্ছিদ্র করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের আক্রশের মুখে পড়ল পুলিশ। করোনা আবহে এ রাজ্যে পুলিশের উপর এমন হামলা নজিরবিহীন। মঙ্গলবার হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার বেলিলিয়াস রোডে পুলিশকে ইট-পাটকেল ছুড়ে তাড়া করে লকডাউন ভঙ্গকারী জনতা। এরপর টিকিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতেও আক্রমণ করা হয় বলে খবর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় রীতিমত উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জানা যাচ্ছে, শেষমেষ এলাকা ছেড়ে পিঠটান দেয় পুলিশকর্মীরা। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘পুলিশ আবেদন জানালেও মানুষ শুনছে না। পুলিশকে সাহায্য করা দরকার।’ তবে ঘটনা ঘিরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কড়া পদক্ষেপ হবে বলে জানায় প্রশাসন। দোষীদের কঠোর শাস্তি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মমতা সরকারকে বিঁধে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন যে, 'প্রশাসন লকডাউন কার্যকর করতে চায় না। পুলিশও নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সক্রিয় নয়।'
ঠিক কী হয়েছে টিকিয়াপাড়ায়?
স্থানীয়দের বক্তব্য, এদিন মহিলারা কেনাকাটা করতে বাজারে বেরিয়েছিলেন। মূলত তাঁদের সঙ্গেই তর্ক বাঁধে টহলরত র্যাফের। সেই বচসা থেকেই এই ঘটনা ঘটে। বহু মানুষ ঘটনাস্থলে জড় হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকিয়াপাড়ায় এদিন একসঙ্গে বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। তখন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা লকডাউন কার্যকর করতে সামাজিক দূরত্ব মানতে তাঁদের কাছে আবেদন জানায়। আবেদনে তেমন কাজ না হলে এক পুলিশকর্মী লাঠি উঁচিয়ে একবার তেড়ে যেতেই রে রে করে পাল্টা তাড়া করতে শুরু করে জনতা। এরপরই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। তখন আতঙ্কে পুলিশই প্রাণপনে দৌড়তে থাকে। এরপর প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় পুলিশ। জানা গিয়েছে, পুলিশের একটি জিপও ভাঙচুর করা হয়েছে।
এই বিষয়ে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, "বেলিলিয়াস রোডে লকডাউন নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ টহল দিচ্ছিল। সেই সময়ে কয়েকজন মহিলার সাথে তাঁদের বচসা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন মানার জন্যে মুখ্যমন্ত্রী বারবার অনুরোধ করছেন। পুলিশও বারেবারে একই কথা জানাচ্ছেন। তারপরেও কিছু মানুষ কথা শুনছে না। তার ফলেই পুলিশকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামালাতে হচ্ছে। এখন পুলিশকে সাহায্য় করতে হবে"। সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পুলিশ এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। ঘটনার পরে পুলিশ এলাকার মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও জানান ওই আধিকারিক।
এদিকে, বাংলায় লকডাউনের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে হাওড়া পরিদর্শন করে গিয়েছে। এছাড়া কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তরবঙ্গেও পরিদর্শনে গিয়েছিল এই দল। কেন্দ্র একাধিকবার এরাজ্যের লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চিঠিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক তিক্তও হয়েছে। আর এর মধ্যেই লকডাউন পর্বে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উপর জনতার আক্রশ প্রকাশে রীতিমত শঙ্কিত সংশ্লিষ্ট মহল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন