BJP-TMC: বাড়িতে ভোট চাইতে এসে পদ্ম শিবিরের লোকজন নাকি আঙুল কামড়ে ছিঁড়ে দিয়েছে! আঙুল খুইয়ে কেঁদে ভাসালেন জোড়াফুল শিবিরের এক কর্মী। এমনই এক ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) জামালপুরের (Jamalpur) জৌগ্রামে। আঙুল খোয়ানো ঘাসফুল শিবিরের কর্মী বাবাই মিস্ত্রির দায়ের করা অভিযোগে ভিত্তিতে পুলিশ বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী কার্তিক মির্ধাকে গ্রেফতার করেছে। তবে বাবাইও রেহাই পাননি। BJP-র পঞ্চায়েত সদস্যাকে মারধর ও তাঁর শ্লীলতাহানির অভিযোগে পুলিশ বাবইকেও গ্রেফতার করেছে। চলছে বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজও।
চতুর্থ দফায় অর্থাৎ আগামী ১৩ মে বর্ধমান-পূর্ব লোকসভা আসনের নির্বাচন। জামালপুর বিধানসভা এই লোকসভারই অন্তর্গত। ভোটের দিন এগিয়ে আসতেই BJP ও তৃণমূল, উভয় শিবিরেই চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে। জামালপুরের জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও চলছে জোরদার প্রচার। এই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ১৯ সদস্য থাকলেও বিজেপির ৩ জন এবং CPM-এর দু’জন নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। তার মধ্যে জৌগ্রামের বাদপুর এলাকাতেই BJP-র দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন।
পাশের দোগাছিয়া এলাকার সদস্যও BJP-র। লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) প্রচারে তাই বাদপুর এলাকার BJP কর্মীরা তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে নেমে পড়েছেন। সেই প্রচারকে কেন্দ্র করেই বাদপুরে ব্যাপক অশান্তি ঘটে গিয়েছে। যার রেশ জামালপুর থানার সামনেও আছড়ে পড়েছিল।
হাতের আঙুল খোয়ানো তৃণমূল কর্মী বাবাই মিস্ত্রির বাড়ি বাদপুর গ্রামে। জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতালে
চিকিৎসা করিয়ে তিনি জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁদের গ্রামের BJP-র পঞ্চায়েত সদস্যা জবা মির্ধা ও তাঁর স্বামী কার্তিক মির্ধা, তাঁদের দলেরই কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন।
বাবাইয়ের কথায়, "আমার বাড়ির দেওয়ালে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে দেখে তারা চটে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করে। আমার পরিবারের সবাই প্রতিবাদ করেন। এরপরেই কার্তিক মির্ধা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে আমার হাতের আঙুলে কামড় বসিয়ে দেয়। আঙুলের একাংশ কামড়ে খেয়ে নেয়। এমনকী আমাকে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দেয়।"
যদিও তৃণমূল কর্মী বাবাই মিস্ত্রির অভিযোগের সম্পূর্ণ উল্টো কথা পুলিশকে জানিয়েছেন BJP পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী কার্তিক মির্ধা। লিখিত অভিযোগে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, BJP-র হয়ে ভোটের প্রচারের জন্য তিনি ও তাঁর স্ত্রী জবা দলের কয়েকজনকে নিয়ে বাদপুরের হরিমন্দির সংলগ্ন এলাকায় যান। ওই সময় পরকল্পনা মাফিক এলাকার তূণমূলের কর্মীরা রড, বাঁশ, শাবল নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হয়। অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে। কার্তিকের অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করলে বাদপুরের তৃণমূল কর্মী বাবাই মিস্ত্রি ও তার দলবল তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারতে শুরু করে। তা দেখে তাঁর স্ত্রী জবা মির্ধা ছাড়াতে গেলে তার উপরেও চড়াও হয় বাবাই ও তাঁর দলবল। তাঁরা জবার শ্লীলতাহানিও করে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today: তুমুল ঝড়-বৃষ্টির জোরালো দাপট আজও! কোন কোন জেলায় ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী?
এলাকাবাসীরা এসে তাঁদের গিয়ে উদ্ধার করেন বলে কার্তিক মির্ধা পুলিশকে জানিয়েছেন। যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে কার্তিক মির্ধা নিজেই স্বীকার করেছেন দলের অন্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বাবাই মিস্ত্রির বাড়িতে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন। তাহলে বাবাই মিস্ত্রির আঙুলে কামড় বসাল কে?
এই প্রশ্নের উত্তরে কার্তিক মির্ধার সাফাই, "ধাক্কাধাক্কির সময় দরজার কোনে আঙুল লেগে গিয়ে হয়তো এমনটা হতে পারে।" বাবাইয়ের আঙুল কামড়ে খেয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে সেটা মিথ্যা বলে দাবি কার্তিক মির্ধার।
জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, “বাংলার ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হোক এটা BJP চায় না। জৌগ্রামের বাদপুরের ঘটনা তার বড় প্রমাণ। ভোট চাইতে যাওয়ার নাম করে বাদপুরের তৃণমূল কর্মী বাবাই মিস্ত্রির বাড়িতে গিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে ওরা। বাবাইয়ের হাতের আঙুল কমড়ে খেয়ে নিয়েছে বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। এই সব অপকর্মের জবাব জামালপুরের মানুষ EVM-এ দেবেন।"
আরও পড়ুন- WB HS Results 2024: ‘সবাই ডাক্তার হলে রুগী হবে কে?’, ছকভাঙা কেরিয়ারের স্বপ্ন দ্বিতীয় সৌম্যদীপ সাহার
এদিকে, তৃণমূল বিধায়কের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে জেলা BJP নেতা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, “ভোটের সময় সারা বাংলা জুড়ে হিংসার বাতাবরণ তৈরি করেছে তৃণমূল। BJP কর্মীরা ভোটের প্রচারে বের হলেই তাদের তৃণমূল কর্মীদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। বিজেপির মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যরাও সেই হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তার বড় প্রমাণ জৌগ্রামের বাদপুরের ঘটনা।"