/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/03/political-kites-kolkata-lok-sabha-poll-2024.jpg)
Kites: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক আঁকা ঘুড়ির পসরা নিয়ে বিক্রেতা অজিত দত্ত (বাঁদিকে)। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
Lok Sabha Election 2024: সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে ডান দিকে যে রাস্তাটা সুইমিং পুলের দিকে যাচ্ছে, পুলের ঠিক উল্টো দিকেই পরপর তিনটে ঘুড়ির দোকান। কলকাতা কাইট, বেঙ্গল কাইট এবং ইন্ডিয়া কাইট। শেষ দোকানটাই বসেন অজিতবাবু। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। পুরো নাম অজিত দত্ত। ইন্ডিয়া কাইট ঘুড়ির দোকানের মালিক। ঘুড়ি অন্তত প্রাণ। কলকাতার এই প্রবীণ নাগরিকের মধ্যে তিনি এমনই একজন মানুষ যিনি আজও ঘুড়ি ভালোবাসেন। কিন্তু বাকিদের চেয়ে তাঁর গল্পটা একটু আলাদা। বছর সত্তরের কাছাকাছি হলেও হবে ভাবে এখনও যুবক। তাঁর কাছে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর মানুষটা। দিনের অর্ধেক সময় কাটে দোকানে বসেই। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপ অথবা ভোট- এই সময়গুলোতে তার কাছে অভিনব সব ঘুড়ি। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোটের দামামা বেজে উঠেছে। পাড়ায় পাড়ায় দেওয়ালগুলোতে চলছে রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন। এর মাঝেই অজিতবাবু তৈরি করে ফেলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘুড়ি। কংগ্রেস কিংবা বিজেপি, সিপিএম কিংবা তৃণমূল সকল দলের প্রতীকরা রয়েছে পাশাপাশি।
একটা সময় দেশে ভোট শুরুর আগে ঘুড়ি ছিল ভোট প্রচারের প্রধান অংশ। আকাশে উড়তে দেখা যেত নানা দলের ঘুড়ি। ভোট প্রচারের সময় দলীয় কর্মীদের হাতে হাতে থাকতো তা। ভোট প্রচারে জন্যে এখনও উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাট, দিল্লি, রাজস্থানের বহু জায়গায় ঘুড়ি ব্যবহৃত হলেও এখন বাংলাতে এর চাহিদা কমেছে। অজিত বাবু বলছিলেন, "এখন ঘুড়ির চাহিদা কম। এই যুগের ছেলেরা সব ফোন নিয়েই খেলতে ব্যস্ত থাকে। দোকান শুরুর থেকে ভোট এলেই আমি রাজনৈতিক দলের ঘুড়ি তৈরি করি। আগে অনেক ঘুড়ির বিক্রি ছিল এখন কমে গিয়েছে। তবুও হাল ছাড়িনি।" এসব রাজনৈতিক দলের ঘুড়ির দাম ১০টাকা পার পিস। 'ভোটের ঘুড়ি' তো বানানো হল, বিক্রি হয় কতগুলো? অজিত দত্ত হেসে বলেন একটাও এখনও বিক্রি হয়নি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/03/one_83635b.jpg)
এই শহরের প্রবীণ নাগরিকদের প্রশ্ন করলে জানা যায়, ভোটের ময়দানে কলকাতা শহরে ভোটের ঘুড়ির ভালই কদর ছিল। তবে দিনে দিনে সেই ব্যবহার কমে আসছে। এখন লোকেরা ডিজিটাল প্রচারকে বেশি গুরত্ব দেন। একই মত ইন্ডিয়ান কাইট-এর অজিত দত্তেরও। ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি ঘুড়ি বানাচ্ছেন নিজের শখে। ছেলেকেও হাতে ধরে শিখিয়েছেন ঘুড়ি তৈরি। ভোটমুখী বাংলায় তাঁর দোকানের সামনে একের পর এক সারিবদ্ধ হয়ে ঝুলছে "ভোটের ঘুড়ি"। পথ চলতি মানুষ কেউ আড় চোখে একবার দেখে নিচ্ছেন। আর কেউ দোকানের সামনে দাড়িয়ে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন সব ঘুড়ির। তবে প্রশ্ন একটায়, এই সময়ে ভোট প্রচারে ঘুড়ির ব্যবহার কতটা করছে রাজনৈতিক দলগুলি? ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগেও নানা জায়গায় ঘুড়ি উড়িয়ে প্রচার দেখা গিয়েছিল। অজিত দত্ত বলছেন, এখন তিনি "ভোটের ঘুড়ি" তৈরি করলেও, প্রচারে ঘুড়ির ভূমিকা তেমন নেই। আগে নেতারা অর্ডার দিয়ে যেতেন পাইকারি দরে। প্রচারের আগে দলের কর্মীরা এসে প্রচুর ঘুড়ি নিয়ে যেতেন। এখন আর তেমনটা নেই। দিন বদলেছে। বিশ্বকর্মা পুজোর সময়েই তো এখন কেউ আর আগের মতন ঘুড়ি ওড়ায় না। আমি ঘুড়ি বানাই আমার শখে। যতদিন বাঁচবো এটা চালিয়ে যাবো।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/03/two_97e26b.jpg)
নয়ের দশকে অজিত দত্ত আহমেদাবাদের আন্তর্জাতিক ঘুড়ি ফেস্টিভ্যালেও বেশ কয়েকবার অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বানানো চার্লি চ্যাপলিন ঘুড়িও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। বাংলার অভিনেতা রবি ঘোষ থেকে মুম্বইয়ের জনি ওয়াকার এবং আসরানিও তারিফ করেছেন তাঁর কাজের। তাঁদের হাত থেকেই বেশ কিছু পুরস্কারও নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে শরীর অনেক ভেঙে পড়েছে। চোখের দৃষ্টিও কমজোর হয়েছে। অজিত বাবুর কথায়, আগের মতন ভোটের পরিবেশও এখন নেই। মানুষ এখন অনেকবেশি হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। যেভাবে সব কিছু বদলে যাচ্ছে একদিন আস্তে আস্তে আকাশ থেকে হারিয়ে যাবে এই 'ভোটের ঘুড়ি'।