এ যেন দক্ষিণী সিনেমার রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার। যার পরতে পরতে চমক। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে চুঁচুড়ার কোদালিয়া মনসাতলা এলাকায় এক দুস্কৃতির বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করলো চুঁচুড়া থানার পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছে আট জন দুষ্কৃতিকে। ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে।
৬ আগস্ট হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতি টোটোন বিশ্বাসকে মেডিকেল চেকআপ করতে ইমামবাড়া নিয়ে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতেই তার ওপর গুলি চালায় বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন। পেটে গুলি লাগে টোটনের। বরাত জোরে বেঁচে যায় সে। চুঁচুড়া হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার করে তার গুলি বের করে দেওয়া হয়েছিল । এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসএস কে এম হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে চন্দননগর কমিশনারেট।ওই ঘটনার দুদিন পরেই টোটনের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা পুলিশের জালে চলে আসে। তৃতীয় ঘটনা আরও রোমহর্ষক। গত ১১ তারিখ এস এস কে এম থেকে টোটন বিশ্বাসের ছুটি হয়ে যায়। ওই হাসপাতাল থেকে চুঁচুড়া কোর্টে নিয়ে যাওয়ার সময় কলকাতা থেকেই টোটন এর গ্যাং এর ছেলেরা ওই প্রিজন ভ্যানের পিছু নেয়। একদম দক্ষিণী সিনেমার মতো। দাদা যাচছে ভ্যানে তার আগে পিছে চারচাকা ও বাইক বাহিনী যাচ্ছে।
টের পেয়ে যায় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। হুগলির সীমানায় প্রবেশ করতে আগে পিছে ঘিরে ঘিরে ফেলে ডানকুনি থানার পুলিশ। গাড়ি গুলো আটক করে সবাইকে নামিয়ে দিল্লি রোডের ধারে হাত তুলে বসানো হয়। মোট ৩৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ। দেখা যায় প্রত্যেকেই কমবেশি দাগী দুস্কৃতি। ধৃতদের মধ্যে টোটনের ভাই রূপচাঁদও ছিল। তাদের জেরা করে পুলিশ আরো কিছু দুষ্কৃতীদের সন্ধান পায়।
চুঁচুড়ার রবীন্দ্র নগর এলাকায় টোটনের বাড়ি। তার সঙ্গীরা গ্রেফতার হতেই গ্যাং এর বাকিরা এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। কোদালিয়াতেও আশ্রয় নেয় কয়েকজন। খবর পেয়ে গতকাল রাতে মনসাতলায় সুকুমার মাঝি ওরফে সুকুর বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার করে। ২০ টি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। তার মধ্যে ছিল ৯ এমএম পিস্তল ,পাইপ গান। উদ্ধার হয় তিনটি ফাঁকা ম্যাগাজিন ও ২০৭ রাউন্ড কার্তুজ। ২ কেজি বিস্ফোরকও উদ্ধার করে পুলিশ।
হীরালাল পাশোয়ান (হিরুয়া), সুজিত মন্ডল, সোমনাথ সরদার (জিতু), বিকাশ রাজভর, রবি পাশোয়ান (রবিয়া), নীল পাশোয়ান, সুকুমার মাঝি ও সৌমিত্র কর্মকার ওরফে ফাটা- মোট আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য এর আগে ২০২০ সালে টোটনকে যখন চুঁচুড়া থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তখন তার কাছ থেকে কার্বাইনের মতো আধুনিক অস্ত্র সহ প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল।টোটনকে গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাবু পাল সহ পাঁচজনকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।