/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/30/1000231927-2025-09-30-13-17-07.jpg)
Lotus farming: সংকটে পদ্মফুলের চাষ।
দেবাদিদেব মহাদেবের মানসপুত্র “রাবণকে“ ’বধ করতে অকালে দুর্গা পুজোর সংকল্প করেছিলেন রামচন্দ্র।সেই কারনে এইপুজো ’অকালবোধন’ নামেই পরিচিত। শরৎকালে মহাসন্ধির সন্ধিক্ষনের অন্ধকারকে আলোকিত করতে রামচন্দ্র ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি দেবীর চরনে ১০৮টি নীল পদ্ম নিবেদন করে এই পুজো সম্পূর্ণ করে ছিলেন। সেই থেকে আজও দুর্গাপুজোর মহাষ্টমি তিথির সন্ধিপুজোয় ১০৮টি পদ্ম দেবীর চরণে নিবেদন করার রীতি চালু আছে। কিন্তু জলাশয় সংকটের কারণে পদ্মচাষ দুস্কর হতে বসায় সেই রীতি বজায় রাখাই এখন দুস্কর হতে বসেছে।
একটা সময় ছিল যখন রাজ্যের অন্যান জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও পর্যাপ্ত পদ্মের চাষ হত। কিন্তু এখন শহর ছাড়িয়ে জেলার গ্রাম গুলিতেও লেগেছে নগরায়নের ছোঁয়া।তারই কারণে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে খাল,বিল ও জলাশয়।এরসাথে যুক্ত হয়েছে প্রকৃতির বিরুপতা ও বানবন্যা।পদ্ম চাষিদের কথায়,’এসবের দরুণ পদ্মচাষে সংকট তৈরি হওয়ায় ক্রমশ বাড়ছে পদ্মের জোগান ঘাটতি।মহাষ্টমির দিনের সন্ধি পুজোর জন্য ১০৮টি পদ্ম পাওয়া এখন দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের কাছে দুস্কর হয়ে উঠছে।
পদ্মচাষী অমিত মালিক ও সন্তু বেরা বলেন, নগরায়নের দাপটে জলাশয়ের ঘাটতি যে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায়না। তবুও মুনাফার আসায় পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ বিভিন্ন জায়গার চাষিরা কেউ জলাশয় খুঁজে নিয়ে,আবার কেউ একটু নিচু চাষের জমিতে এখন পদ্ম চাষ করছেন।সন্ত বেরার বাড়ি হাওড়া জেলার বাগনানে হলেও তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু ফুল ব্যবসায়ীকে দুর্গাপুজার সময় পদ্মফুল সরবরাহ করেন।
মহাষ্টমীর আগেই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের ফুল ব্যবস্যায়ী স্বরুপ পালকে পদ্মফুল দিতে আসেন সন্তু বেরা। ওইদিন তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কে বলেন,“বড় জলাশয় বা দিঘির পরিবর্তে আমরা জলধারণে সহায়ক চাষজমি ’লিজে’ নিয়ে থাকি।সেখানেই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে ’পদ্মচাষ’ শুরুকরি।এই পদ্ধতিতে পদ্মচাষের মেয়াদ থাকে চল্লিশদিন।এইভাবে চাষ করে গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ পিস করে পদ্ম পাওয়া যায়।সেই পদ্ম ফুলই আমি বাজারে সরবরাহ করি।“
পদ্মচাষি সন্তুর কথা অনুযায়ীয়,“এখন পদ্মফুল চাষের খরচ আগের থেকে বেড়েছে।নিজের জমি থাকলে বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্মফুলের চাষ করে বিঘা প্রতি ১০-১২হাজার টাকার মতো খরচ হয়।আর জমি ’লিজ’ নিয়ে পদ্ম চাষ করলে সেটা ১৫ হাজার টাকায় উপরে দাঁড়াবে।বছরের অন্য সময়ে পদ্ম ফুলের চাহিদা তেমন একটা থাকেনা।মূলত বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে দুর্গাপুজো ও কালি পুজো পর্যন্ত পদ্মের চাহিদা বেশী থাকে“।
সন্তু এও দাবি করেন,“এবছর বিশ্বকর্মা পুজোর কয়েকদিন পর থেকে সপ্তাহ খানেক আবহাওয়া খুব একটা ভালো যায় নি। তার কারণে পদ্ম চাষে বিঘ্ন ঘটেছে। এর জন্য একটু হলেওমহাষ্টমীর বাজারে পদ্মের যোগান ঘাটতি হয়েছে বলে পদ্ম চাষি সন্তুর দাবি।
বর্ধমানের ভাতারের নতুন গ্রামের পদ্মচাষি অমিত মালিক বলেন,যোগান ঘাটতির কারণে এবছর মহালয়ার পরথেকে দাম বেড়ে গিয়ে পাইকারি বাজারে প্রতিপিস পদ্ম ৩০-৩৫ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রী হয়েছে। এত দামের জন্য সন্ধিপুজোয় দুগ্গা মাকে ১০৮ পদ্ম নিবেদন করার সাধ থাকলেও অনেকেই হয়তো সেই সাধ পূরণ করতে পারবেন না।
পদ্মফুল চাষিরা আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, শহর ও মফস্বলের পুজোকর্তারা বিশাল মন্ডপ ও দুর্গা প্রতিমা তৈরিকরে পুজো করছেন। তাতে থিম ভাবনা ও আলোর রোশনাইয়ের ঘনঘটা থাকছে। কিন্তু পদ্ম চাষের সংকট নিয়ে পুজো উদ্যোক্তা বা সরকার,কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন না। এমনটা চলতে থাকলে আগামীদিনে বাংলার দুর্গোৎসব পদ্মবিহীন দুর্গোৎসবে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us