ছেলেধরা গুজবে তোলপাড় আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। নিত্য ঘটে চলেছে একের পর এক গণপ্রহারের ঘটনা। মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। রাজ্য বিধানসভায় গণপিটুনি নিয়ে কড়া আইন পাস হওয়াই যেন সার। প্রচারের ঢক্কানিনাদের পরও মানুষের সচেতন হওয়ার বিন্দুমাত্র কোনও লক্ষণ নেই।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এক সপ্তাহে ঘটে গিয়েছে একাধিক গণপ্রহারের ঘটনা। স্থানীয়দের নিয়ে পুলিশের বৈঠক, গুজবে কান না দেওয়ার জন্য মাইকিং, তবু কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই গণপ্রহারে মৃত্যু হয়েছে একজনের, একাধিক ব্যক্তি জখম হয়েছেন।
EXCLUSIVE: ‘মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি’
গণপিটুনির ঘটনা প্রথমে শুরু হয় আসানসোলে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দুর্গাপুরে। গত কয়েকদিন ধরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরা ধরতে রাত জাগা শুরু করেছেন স্থানীয় যুবকরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ছেলেধরাও দেখেননি। সে কথা বাসিন্দারা স্বীকারও করেছেন। তবে তাঁরা যে আতঙ্কিত, তা জানাতেও ভুলছে না। এখনও পর্যন্ত যাঁদের মারধর করা হয়েছে, তাঁরা প্রায় সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন। বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। পুজোর মুখে ছেলেধরা গুজবে পুলিশের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মমতার অভয়বাণী সত্ত্বেও বাংলায় এনআরসি কাঁপুনি থামছে না
দুর্গাপুরের বাসিন্দা নিনুয়া বাগদি বলেন, ‘‘ছেলেধরা বেরিয়েছে। ছেলেধরা এসেছিল। তবে আমরা দেখিনি। আমরা খুবই আতঙ্কিত, ভয় পাচ্ছি। ঘরে ছেলেরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। অচেনা মুখ দেখলেই সন্দেহ হচ্ছে’’। আরেক বাসিন্দা ভৈরব বাউড়ি জানান, ‘‘ছেলেধরা গুজব নিয়ে এখন সাধারণ বাসিন্দারা ভীত হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। এলাকার মানুষ ভয় পাচ্ছে কখন কে চলে আসবে!’’
আরও পড়ুন: কেন ম্যাথুকে পাঠিয়েছিলেন? মির্জার গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন মুকুল
ছেলেধরা সন্দেহের রোজ কিছু না কিছু ঘটছেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায়। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটা। সগরভাঙা মুসলিম পাড়ায় বাচ্চাকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর হাতে বস্তা ছিল। মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গিয়েছিল। কোনও ভাষা জানেন না। ছেলেধরা সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে গণপ্রহার করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কোকওভেন থানার পুলিশ। ২০ সেপ্টেম্বর বীরভানপুরে এক ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। তিনিও মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গিয়েছিল। ২২ সেপ্টেম্বর ডিপিএলের আমবাগান এলাকায় গণপিটুনির শিকার হন অন্ডালের এক যুবক। পরিবারের সদস্যরা খবর পান ২৬ তারিখ। বাড়ির লোক এসে মৃতদেহ চিহ্নিত করে। পরিবারের অভিযোগ, তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ২২ সেপ্টম্বর রাত আটটা। দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ে এক ভারসাম্যহীন মহিলাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা ওই মহিলাকে চিনতে পারেন। চলতি মাসের ২৩ তারিখ রাতে দুর্গাপুর বাজারের লিলুয়া বাঁধ এলাকায় এক সাধুবাবাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁকে জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। তাঁকে উদ্ধার করতে এলে পুলিশের ওপর চড়াও হন স্থানীয়রা। এই ঘটনায় ৬ জনের এক মাসের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সেনা জওয়ান মত্ত অবস্থায় সগরভাঙা এলাকায় ঢুকে পড়ে। সন্দেহ হওয়ায় রাতে তাঁকে স্থানীয়রা মারধর করেন বলে অভিযোগ। ছেলেধরা গুজবে ঘুম ছুটেছে শিল্পাঞ্চলের।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার ডিপি সিং বলেন, ‘‘সব জায়গায় ছেলেধরা গুজব নিয়ে পুলিশ সচেতন করছে। হেল্পলাইন নম্বর, থানার নম্বর দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সন্দেহভাজন লোককে ধরে থাকলে পুলিশকে খবর দিতে বলা হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশে খবরও দিচ্ছে। যাঁরা নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ পেয়ে ধরছি। কোনওভাবেই গুজব ছড়াবেন না’’।