'মা আই ক্যুইট'। সাদা বোর্ডে দুপুর আড়াইটেতে একটা হাসির ইমোজি সহ কালো কালি দিয়ে লিখে আত্মঘাতী হল দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। এই ঘটনায় ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরজুড়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শোবার ঘর থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির জ্যোতিনগর এলাকায়। শহরের এক নামী স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল সে। তার ঝুলন্ত দেহের পাশেই ছিল সাদা বোর্ডে তাঁরই করা অসমাপ্ত অংক। আর তার নিচেই মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা 'মা আই ক্যুইট'। মানসিক অবসাদ নাকি অন্য কোনও কারণ তা নিয়ে ধন্দে পরিবার ও ভক্তিনগর থানার পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া।
'মা আই ক্যুইট'। সাদা বোর্ডে কালো কালি দিয়ে লিখে আত্মহত্যা করল দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সোমনাথ সাহা। শিলিগুড়ি উচ্চতর বালক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের স্বপ্ন ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। তবে তার এই স্বপ্নে বাধ সাধল মানসিক অবসাদ! সোমনাথ সাহা বরাবরই পড়াশুনায় ভালো ছাত্র ছিল। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নাম্বার ৯৩ শতাংশ। তবে উচ্চমাধ্যমিকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু মাঝপথেই থমকে গেল বছর ১৮ এর ছাত্র সোমনাথ সাহার সেই স্বপ্ন। বুধবার সন্ধ্যায় তার শোওয়ার ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক সূত্রে খবর, ওই দিন দুপুরে অন্য দিনের মতো সে সকলের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মিশেছে এবং কথা বলেছে। তারপর দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সে নিজের ঘরে গিয়ে পড়াশুনা করছিল। তবে বিকেল নাগাদ আচমকাই তার ঠাকুমা দেখতে পায় ঘরের ভেতরে থাকা সিলিং ফ্যানে ঝুলছে সোমনাথের নিথর দেহ। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করে ভক্তিনগর থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বুধবার দুপুরে ওই ছাত্রের মৃতদেহ আনা হয় তার বাড়িতে। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা।
সোমনাথের বাবা সুবীর সাহা বলেন, 'ছেলে সারাদিন পড়াশুনাতেই ব্যস্ত থাকত। পড়াশুনা ও তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল সে। গতকাল দুপুরে বাড়িতে সবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় পড়াশুনা করতে। তারপর বিকেল নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। হয়তো অংক করছিল সেই অংক না মেলায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।' সোমনাথের বন্ধু হৃষিরাজ ভাওয়াল বলেন, 'সোমনাথ বরাবরই পড়াশুনা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। ১৯ শে জানুয়ারি তার জন্মদিন ছিল। সেদিন সে সকলের সঙ্গে আনন্দ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি সমস্ত প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করে বাড়িতেই পড়াশুনা করবে বলে জানিয়েছিল। তারপর এই ঘটনা। ও পড়াশুনায় ভালো ছিল। কোনও বাজে স্বভাব ছিল না।'
এই ঘটনার পর তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে ভক্তিনগর থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, সোমনাথ ও তার বন্ধুদের একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ছাত্র মৃত্যুর পর থেকেই বন্ধুদের প্রায় প্রত্যেকের মোবাইল ফোন সুইচ অফ রয়েছে। ঘটনার দুদিন আগে থেকে গ্রুপের সব ম্যাসেজ ডিলিট করা হয়েছে। এই বিষয়টা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পরিবারের তরফেও অস্বাভাবিক মামলা দায়ের করা হয়েছে ভক্তিনগর থানায়। সূত্রের খবর, প্রয়োজনে মৃতের বন্ধুদের জেরা করবে পুলিশ।