একচিলতে কচুরির দোকান থেকেই স্বপ্ন বুনছেন হাবড়ার মৌমিতা। তরুণীর লড়াইয়ের এই কাহিনী ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে অনেকেরই নজরে এসেছে। সংসার চালাতে নিজেই স্টেশন চত্বরে চালাচ্ছেন কচুরির দোকান। সেই সঙ্গে MA-এও করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মৌমিতা মাঝি।
এমবিএ চাইওয়ালা হোক অথবা বিটেক চাইওয়ালা তাদের কাহিনী আমাদের সকলেরই জানা। তাদের জীবন সংগ্রাম অনুপ্রাণিত করে হাজার হাজার মানুষকে। সেই সঙ্গে অসহায় পরিস্থিতির সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সাহস জোগায়। তেমনই হাবড়ার মৌমিতার এই কাহিনীও ইতিমধ্যে অনুপ্রাণিত করেছে অনেকেই।
ছোট থেকে বাবার হাত ধরে নিজেদের এক চলতে কচুরির দোকানে আসার শুরু। সেই দোকান যে নিজের হাতেই একদিন চালাতে হবে তা হয়ত ঘুনাক্ষরেই ভাবেননি এম.এ পড়ুয়া মৌমিতা। বিধাননগর গভঃ কলেজ থেকে স্নাতক শেষে এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ করছেন তিনি। সেই সঙ্গে বাবার মৃত্যুর পর স্বপ্নপূরণে নিজেই চালাচ্ছেন কচুরির কচুরির দোকান। দোকান থেকে সামান্য আয়েও আগামীর স্বপ্ন বুনছেন তিনি।
আরও পড়ুন Premium: ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, একচিলতে ক্যাফেতেই লড়াই জারি স্বর্ণপদক জয়ী যুবকের
লিভার সিরোসিসে বাবাকে হারিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মৌমিতার। মায়ের অসহায়তা সেদিন বাধ্য করে দোকানে গিয়ে মৌমিতাকে কচুরি বিক্রি করতে। সেই সময়ে টলমলে সংসারে কিছুটা আলোর দিশা খুঁজে পায় মৌমিতার উপার্জনে।
হাবরা স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওভার ব্রিজের ওঠার ঠিক দির্ঘদিনের পারিবারিক কচুরির দোকান পরিবারের। আগে একসঙ্গে দোকান থাকলেও পরে দোকানের মালিকানা দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়। এই দোকানের বিখ্যাত কচুরির কথা হাবরার মানুষের মুখে মুখে। সকাল হতে না হতেই দোকানের সামনে ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন। করোনা পরিস্থিতির একেবারে বদলে দেয় চিত্রটা। অতিমারি পরিস্থিতি জমানো আয়ে থাবা বসাতে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে ছিল বাবার চিকিৎসার খরচও। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাবা বিষ্ণু ওঝার। তারপর থেকেই লড়াই জারি রাখে মৌমিতা।
নিজের হাতেই হাল ধরে দোকানের। মেয়েকে সঙ্গ দিতে মাঝে মধ্যে মা’ কল্পনা ওঝাও মাঝে মধ্যে আসেন দোকানে। সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাঝেও পড়াশুনায় কোন ফাঁক রাখতে চান না তিনি। লক্ষ্য জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। ইতিমধ্যেই মৌমিতার কচুরির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে লোকমুখে। সকাল হতেই ভিড় লেগে থাকে ভ্লগারদের। তার মাঝেই হাসি মুখে কচুরি ভেজে চলেন মৌমিতা।
নিজের সংগ্রামের কাহিনী বলতে গিয়ে মৌমিতা জানিয়েছেন, “বাবার মৃত্যুর পর আমি দোকানের হাল না ধরলে পরিবারটা হয়ত ভেসে যেত। প্রথম প্রথম ব্যবসা বুঝতে কিছু সমস্যা হলেও অল্প দিনেই সবটা রপ্ত করে ফেলি। দোকানে আমি ছাড়াও আমাকে সাহায্য করতে মাঝে মধ্যে মা’ও এসে বসেন। সেই সঙ্গে জোর কদমে চলেছে আমার MA-এর সিলেবাস শেষের জন্য পড়াশুনাও”। পড়াশুনা শেষে স্টার্টআপ খোলার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন মৌমিতা। তবে সেক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা চিন্তায় ফেলেছে লড়াকু মৌমিতাকে।