প্রায় সাত মাস কারাবন্দি 'বাঘ' অনুব্রত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বদলে যাচ্ছে কেষ্ট গড় বীরভূমের জোড়-ফুলের অন্দরের ছবি। আপাতত নেত্রীর ঠিক করে দেওয়া কোর কমিটির সদস্যদের হাতে জেলার দলীয় সংগঠনের ভার। আর তাতেই প্রায়ই প্রকাশ্যে আসছে দলের গোষ্ঠী কোন্দলের রূপ। এই অবস্থায় লালা মাটির বীরভূমে দলের পোক্ত সংগঠন ধরে রাখাই যেন চ্যালেঞ্জ তৃণমূল নেতৃত্বের সামনে।
সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি বলে বুধবার জানালেন মদন মিত্র। এ জন্য তাঁকে কী করতে হবে তাও স্থির করে ফেলেছেন কামারহাটির 'কালারফুল ' বিধায়ক।
কী বলেছেন মদন মিত্র?
গরু পাচারের অভইযোগে গ্রেফতার হলেও অনুব্রত মণ্ডলকে এখনও বীরভূম জেলায় তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরায়নি তৃণমূল। 'দিদি'র প্রিয় কেষ্টর আপাতত ঠাঁই বাংলা ছেড়ে দিল্লির ইডি দফতর। বহু দূরে তৃণমূলের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতা। সুতরাং জেলায় দলের রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা।
জেলা রাজনীতিতে অনুব্রতর বিপক্ষ শিবিরের নেতা বলে পরিচিত নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক কাজল শেখ সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। অনুব্রত আসানসোলের জেলে থাকাকালীন বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন এই কাজল শেখ। থাঁর অভিযোগ ছিল, আসানসোল জেলে থাকাকালীন কেষ্ট ফোনে কথা বলতেন এলাকার নেতাদের সঙ্গে। দলের কাজ কীভাবে চলবে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সহ সবকিছুর উপর অনুব্রতর কন্ট্রোল ছিল। দলের জেলা সভাপতি কথা বলতেন সিউরির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গেও।
এখানেই শেষ নয়। এদিন কাজল বলেছেন, 'অনুব্রত না থাকলেও আগামী পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের কোনও অসুবিধা হবে না।' ফলে নেতৃত্ব নিয়ে যে ঘাস-ফুলে কোন্দল রয়েছে তা স্পষ্ট।
এসবের মধ্যেই বীরভূমে দলের পোক্ত জমি অটুট রাখতে মরিয়া তৃণমূলের পুরনো দিনের সৈনিক মদন মিত্র। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে বীরভূমের দায়িত্ব নিতে রাজি বলে দাবি করেছেন। মদন মিত্র বলেছেন, 'একটা অনুব্রত গেছে, কিন্তু হাজারটা মদন মিত্র-দেবাংশু তৈরি হয়েছে। আমাকে দিন না, আমি বীরভূমে এক মাস থেকে ভোট করতে রাজি আছি। অনুব্রতর হাতে তৈরি করা মাটি, সেই মাটি কিন্তু বদলায়নি। রাঙা মাটি যেরকম শক্ত ছিল, সেরকমই আছে, সেটা ভোটের দিন বোঝা যাবে। আমি রাজি বীরভূমের দায়িত্ব নিতে। অনুব্রতর তৈরি গড় একটা তিহাড় বদলাতে পারবে না'
উল্লেখ্য, রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের আগে বর্ধমানের দায়িত্ব সামলেছিলেন মদন মিত্র। সেখানে থেকে সংগঠন সাজিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১১-র বিধানসভা ভোটে দুর্গ বর্ধমানের বেশিরভাগ আসনই হাতছাড়া হয়েছিল বামেদের। আপাতত নানা বিতর্কিত মন্তব্যে দলেই চর্চায় কামারহাটির বিধায়ক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে অতীতের পুনরাবৃত্তি করে সংগঠনে নিজের জায়গাও পোক্ত করতে মরিয়া 'কালারফুল' নেতা।