Advertisment

সব ক্লাসের একজনই শিক্ষক, 'আজব' স্কুলে শিক্ষা নিয়ে 'ছিনিমিনি' সরকারের!

স্কুলটির এমন বেহাল দশার জেরেই দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যাও কমছে। অভিভাবকরা আর এই স্কুলে ভর্তি করতে চাইছেন না সন্তানদের।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Madhavpur Junior High School has only one teacher to teach students from class V to VIII

কোনওমতে স্কুলটি টিকিয়ে রেখেছেন এই শিক্ষক।

একটি মাত্র শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষকও মাত্র একজনই। শুধু পড়ুয়া এক পাল। এই ভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে পূর্ব বর্ধমানের মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুল। এনিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের হতাশার অন্ত নেই। তবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার দশার মধ্যে স্কুলটা যে এখনও চলছে সেটাই 'বড়কথা' বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। স্কুলটির এমন দুর্দশা সত্ত্বেও প্রশাসনের কারও কোনও উচ্চবাচ্য নেই। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে স্কুলটিতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে নজর দিক প্রশাসন, এমনই চাইছেন এলাকার মানুষজন।

Advertisment

মাধবপুর গ্রামটি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের জাড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অবস্থিত ।এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। আর্থিকভাবেও তাঁরা দুর্বল। আগে মাধবপুর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ছিল না কোনও হাই স্কুল বা জুনিয়র হাইস্কুল। লেখাপড়া শেখার জন্য এলাকার ছেলে মেয়েদের হয় ৬ কিলোমিটার দূরে চকদিঘি, নয়তো ৩-৪ কিলোমিটার দূরে হুগলির দশঘরা হাই স্কুলে যেত হত। আর এই দূরত্বের কারণেই প্রথমিকের গণ্ডি পেরনোর পর মাধবপুর, চকগোপাল, শ্রীকৃষ্ণপুর, মণিরামবাটি প্রভৃতি গ্রামের গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছিল।

বিষয়টি এলাকার মানুষজনকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার স্বার্থে মাধবপুরে একটি হাই স্কুল তৈরির দাবি ক্রমশ জোরালো হয়। শেষমেশ ২০১৭ সালে মাধবপুর প্রাথমিক স্কুলের গা ঘেঁষেই 'মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুল' তৈরি হয়।

এদিকে স্কুল প্রতিষ্ঠা পেলেও সেটিকে আদৌ শিক্ষা সহায়ক স্কুল বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এর কারণটাও যথেষ্ট চমকে দেওয়ারই মতোই। মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, “১৬ ফুট বাই ২৫ ফুট অর্থাৎ ৪০০ স্কয়ার ফুটের একটি মাত্র শ্রেণীকক্ষ নিয়ে চলছে মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুল। টিচার্স রুম, মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী রাখার ঘর, মিড ডে মিল রান্নার ঘর কিছুই স্কুলটিতে নেই। প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে বলে জুনিয়র হাই স্কুলে আলো জ্বলে, পাখা ঘোরে। স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকও একজনও নেই।

চমকের এখানেই শেষ নয়! মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুলে ক্লাস প্রতি পড়ুয়ার সংখ্যাও চমকে দেওয়ার মতো। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া ১১ জন, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৬ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ৭ জন আর অষ্টম শ্রেণীতে মাত্র ২ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে স্কুলের নাম জিজ্ঞাসা করতেই বোঝা গেল এই স্কুলে পড়ে পড়ুয়ারা কেমন শিক্ষা লাভ করছে! স্কুলের নাম বলতে গিয়েও ওই পড়ুয়ারা
ঢোঁকের পর ঢোঁক গিলে চলে। তবে শিক্ষা দানের প্রচেষ্টায় কার্পণ্য রাখেননি একমাত্র অতিথি শিক্ষক। তিনি স্কুলের ২৬ জন পড়ুয়াকে একটি মাত্র শ্রেণীকক্ষে গাদাগাদি করে বসিয়েই নিত্যদিন পড়িয়ে চলেছেন।

আরও পড়ুন- আবহাওয়ায় আমূল বদল কবে? তুমুল বৃষ্টির জোরালো পূর্বাভাস কোন কোন জেলায়?

publive-image

কঠিন অবস্থার মধ্যেই যে মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুলটি চলছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন অতিথি শিক্ষক তপন কুমার নন্দী। তিনি জানান, স্কুলে মূলত আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘু এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়ে। স্কুলের বড় সমস্যা শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষকের ঘাটতি। তপনবাবুর কথায়, ২০১৭ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর দু’জন অতিথি শিক্ষক নিয়ে স্কুলটি চালু হয়। তারপর ২০১৮ সালে এই স্কুলের জন্য দু’জন স্থায়ী শিক্ষক এবং একজন করনিক স্যাংশন হয়। কিন্তু তাঁদের কাউকেই এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তারই মধ্যে দুই অতিথি শিক্ষকও অবসর নিয়ে ফেলেন। এই অবস্থায় অতিথি শিক্ষক হিসেবে ২০২২ সালে তাঁকে নিয়োগ করা হয়। সেই বছরের এপ্রিল মাস থেকে ১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হুগলি জেলার গোপীনগর থেকে এসে তিনি একা মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। স্কুলের অফিসিয়াল কাজকর্মও তাঁকেই সামলাতে হয়। সেটা করতে গিয়ে পড়াশোনা করানোর ক্ষেত্রেও ব্যাঘাত ঘটে।

আরও পড়ুন- ডেঙ্গি রোধে ‘সোজা পথে’ হাঁটছেই না সরকার, ‘ত্রুটি’ ধরে ধরে কী ব্যাখ্যা চিকিৎসকদের?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, "পরিকাঠামোগত ঘাটতি এবং স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় এলাকার অনেক অভিভাবকই মনক্ষুন্ন। তাই অভিভাবকদের অনেকেই তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের মাধবপুর জুনিয়র হাই স্কুলে ভর্তি করার ব্যপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এসবের জন্য এই স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যটাই বিফলে যেতে বসেছে।"

ব্লকের স্কুল পরিদর্শক (এস আই) অনিন্দিতা সাহাকে মাধবপুর জুনিয়র হাইস্কুলে পরিকাঠামোগত ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “টাইম টু টাইম সব রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো আছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।" আর স্যাংশন হয়ে যাওয়ার পর থেকে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও দু’জন স্থায়ী শিক্ষক ও একজন করণিক না মেলা প্রসঙ্গে
স্কুল পরিদর্শকের সাফ জবাব, “ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগ হলে তবেই এর সমাধান সম্ভব”। তবে জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি বলেন, "স্কুলটির বিষয়ে আমি জেনেছি। স্কুলটির উন্নতির ব্যাপারে আমি প্রচেষ্টা শুরু করেছি।"

students West Bengal school Purba Bardhaman TEACHERS
Advertisment