Madhyamik Exam 2024: মাধ্যমিক পরীক্ষা। সোমবার ছিল ইতিহাস। তাই রবিবার রাতে খাবার খাওয়ার পরও গভীর রাত পর্যন্ত পড়েছিল ভাতারের বালসিডাঙা এলাকার বাসিন্দা ভাতার বয়েজ স্কুলের ছাত্র অর্জুন মাজি। তারপর ভোর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। হঠাৎ পায়ে ভীষণ জ্বালা শুরু করে। চোখ খুলেই সে দেখে ঘরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সাপ! শুধু লেজটুকুই দেখতে পেয়েছিল সে। তড়িঘড়ি বাড়ির লোক তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। শুরু হয় চিকিৎসা। রাত পেরিয়ে ভোর হয়। জ্ঞান ফেরে ছাত্রের। এরপর বায়না জুড়ে দেয় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। তাতে সম্মতি দেন চিকিৎসকরাও। সাপের কামড় খাওয়ার পরও হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। প্রবল মনোবলের পরিচয় দিল ভাতার বয়েজ স্কুলের ছাত্র অর্জুন মাজি।
ভাতার গ্রামীন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছাত্র অর্জুনের মনোবল অসীম। তার লেপাপড়া শেখারও অদম্য ইচ্ছাও রয়েছে। তাই সাপের কামড়ের দরুন অসুস্থতা থাকলেও সেসব অর্জুনকে দমাতে পারেনি। পূর্ণ মনোবল নিয়েই অর্জুন এদিন পুরো পরীক্ষা দিয়েছে। আপাতত অর্জুনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবুও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
অর্জুনের মা মনিদেবী জানান, সোমবার অর্জুনের ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। রবিবার অনেকটা রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করে তারপর অর্জুন ঘুমাতে যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ছেলে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। কিন্তু ছেলে স্নান করতে যাওয়ার সময়েই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে। জিজ্ঞেস করলে ছেলে তাঁকে জানায় যে রবিবার রাতে সে ঘরের বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালে তার পায়ে কিছু একটা কামড়ে দিয়েছে। তা শুনেই মা ছেলের পায়ের কামড়ের জায়গাটা দেখতে গিয়ে দেখেন সেখানে দু'টো ক্ষতচিহ্ । তা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ছেলের পায়ে সাপেই কামড়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলের পায়ে সাপ কামড়েছে বুঝতে পেরেই মনিদেবী তাঁর স্বামী উৎপল মাজিকে মাঠ থেকে বাড়িতে ডেকে আনেন। উৎপলবাবু সহ পরিবারের অন্য সকলে মিলে অর্জুনকে তড়িঘড়ি ভাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই অর্জুনের চিকিৎসা শুরু হয় ।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও অর্জুন এদিন ইতিহাস পরীক্ষা দেবার জন্যে তাঁর বাবাকে চেপে ধরে। তখন উৎপলবাবু বাধ্য হয়ে ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। ঘটনা শোনার পর ভাতার হাইস্কুল থেকে যোগাযোগ করা হয় বড়বেলুন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। অর্জুনের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভাতার হাসপাতালে অর্জুনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।
এক দরিদ্র ছাত্রের লেপাপড়া শেখার এমন অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখে তারিফ করেছেন ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সচ্চিদানন্দ হাঁসদা । তিনি বলেন, 'একে তো পরীক্ষার জন্য স্নায়ূর চাপ, তার উপর সাপে কামড়ানোর জন্য উদ্বেগ, এত কিছুর মধ্যেও ওই পড়ুয়ার এদিন পরীক্ষা দেওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। সত্যিই একটা নজির সৃষ্টি করলো আমার স্কুলের ছাত্র অর্জুন।'