একেবারে শিয়রে শমন - পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সামনেই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এবছর দুটি পরীক্ষা হতেই হবে, চলবে না কোনও টালবাহানা। একেতেই দুই বছরের গাফিলতি তার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে পড়েছে অনেকখানি। স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন শুরুও হয়েছিল কিছুদিন আগে। তবে ফের ছন্দপতন! আবারও বন্ধ স্কুলের দরজা। শিক্ষাস্তরে যেন আবার স্তব্ধতা! এই প্রসঙ্গেই আতঙ্ক সর্বত্র - ছাত্র সংগঠন থেকে শিক্ষক মহল, কী বলছেন তাঁরা?
ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ তাদের দিয়েই উন্নতি সম্ভব এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য পরিষ্কার হলেও স্কুল বন্ধ করার বিষয়টিকে কোনওভাবে শ্রেয় বলে দেখছেন না এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, সবসময় শিক্ষাঙ্গন কেন? আর কেনই বা উদ্যোগ নিয়ে ছেলেমেয়েদের টিকাকরণ করা হয়নি? মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা - নয়ত শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হোক, নয়তো রাজ্যের একটি ছাত্র-ছাত্রীও যেন বাদ না যায় - অনলাইনে সেরকম ব্যবস্থা করা হোক! বিষয়টিকে হালকা চালে নিলে একেবারেই চলবে না।
অন্যদিকে বিরোধিতার সুর এবিভিপির তরফেও। রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার বলছেন, "রাজ্যে পানশালা খোলা থাকলে পাঠশালা কেন নয়? ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় ভাঙন ধরেছে, সবার পক্ষে খরচ সামলানো সম্ভব নয়!" তাঁর বক্তব্য, "শুধুমাত্র বিদ্যালয়েই করোনা হচ্ছে, এমনটা নয়। কলেজে কলেজে যেমন টিকাকরণ চলেছে তেমন স্কুলে স্কুলেও শহর থেকে শহরতলীর সর্বত্র এই নিয়ম মেনে কাজ হোক! অবশ্যই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গাফিলতি করা চলবে না।"
অশান্তির ঝলক মিলল শিক্ষক মহলেও! তাঁরা যথেষ্ট স্তম্ভিত এই বিষয়ে। মতিঝিল গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা ঋতুপর্ণা মণ্ডল বলছেন, "শিক্ষা প্রাঙ্গণ বন্ধ করে কোনও লাভ নেই। স্কুলের ভেতরে একরকমের ভগ্নপ্রায় অবস্থা! পড়ুয়ারা শিখতে পারছে না কিছু। এতে ওদেরই লোকসান। দুটো বড় পরীক্ষা সামনে আর ব্যবহারিক বিষয়গুলিতে স্তূপাকার অবস্থা।" তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক কড়া ইঙ্গিত দিয়েই তিনি বলেন, "যখনই ওরা পড়তে শুরু করে তখনই যেন সবকিছু থমকে যায়। ওদের শিক্ষার প্রতি একাগ্রতা হারিয়ে গিয়েছে। নিজের পরীক্ষা ওরা নিজেরা দিক অবশ্যই চাইব। গত দুবছরের পুনরাবৃত্তি হোক চাই না।"
অন্যদিকে মগরা উত্তম চন্দ্র ( উ: মা: ) স্কুলের শিক্ষক রিপন রায় বলছেন, "সিলেবাস নিয়েও সবথেকে বড় সমস্যা। বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে সিলেবাস একেবারে কমানো হয়নি। অক্টোবর মাসে নতুন সার্কুলার অনুযায়ী সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হবে, ফলে নাজেহাল অবস্থা। প্রাক্টিকাল ওরা কিছুই জানে না, তার মধ্যে এই যে আবার স্কুল বন্ধ হল, আবার ওদের পড়াশোনা থেকে মন উঠে যাবে। পরীক্ষা হলে তাও নিজের যোগ্যতায় নম্বর আসবে, অন্তত এবার এটি বন্ধ করা উচিত নয়। সেফটি মেনেই পরীক্ষার বন্দোবস্ত হোক!"
বেশিরভাগের দাবি ঠিক এমনই, এই ভাবে চলতে থাকলে ওদের পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে কেরিয়ারেরও ইতি! সঠিক মূল্যায়ন না হলে ভবিষ্যৎ একেবারে থমকে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।