Maha Kumbh Stampede Updates:মহাকুম্ভের মেলায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মালদার দুই বৃদ্ধা চারদিন পর বাড়ি ফিরে এলেন। কুম্ভমেলার হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে তাঁদের কাছে থাকা দুটি মোবাইলই হারিয়ে যায়। ফলে কোনরকম ভাবেই বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তাঁরা । অবশেষে কয়েকজন পর্যটকের হস্তক্ষেপে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই দুই বৃদ্ধা উত্তরপ্রদেশের কুম্ভমেলা থেকে মালদার বাড়িতে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি মৌনি অমাবস্যার রাতে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় হুড়োহুড়ি জেরে পদপিষ্টের ঘটনার সময় হারিয়ে গিয়েছিলেন ইংরেজবাজার শহরের বুড়াবুড়িতলা এলাকার ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা অনিতা ঘোষ। বিষয়টি জানাজানি হতেই মালদার বৃদ্ধার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানান, এলাকার ১৫ জনের বয়স্কদের একটি টিমের সঙ্গেই অনিতা ঘোষ কুম্ভ মেলায় সাহিস্নানের জন্য গিয়েছিলেন। পদপিষ্টের ঘটনার দিন বৃদ্ধ অনিতা ঘোষ কুম্ভ মেলার সঙ্গম ঘাটের কাছেই ছিলেন। তারপরে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।
এদিন মালদার বাড়িতে ফিরে এসে বৃদ্ধা অনিতা ঘোষ বলেন, লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ের চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে মাটি থেকে উঠতে পারছিলাম না। সেই সময় হাওড়ার কয়েকজন পর্যটক আমাকে টেনে তুলে। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ভিড়ের চাপে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওরাই আমাকে স্থানীয় একটি প্রশাসনের শিবিরে নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে। মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে নি। এরপর তিনদিন হাওড়ার ওই পর্যটকদের সঙ্গে ছিলাম। ওনাদের সঙ্গে বাসে করে প্রথমে হাওড়ায় আসি। এরপর হাওড়া স্টেশন থেকে মালদা আসার জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করে দেয় ওরা। শুক্রবার রাতে মালদার বাড়িতে ফিরে এসেছি। এদিকে নিখোঁজ মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে সমীর ঘোষ। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে সকলে ভেঙে পড়েছিলাম। যারা আমার মাকে মহাকুম্ভের মেলা থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে, তাঁদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে শনিবার সকালে বাড়ি ফিরলেন কুম্ভমেলায় গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া হরিশ্চন্দ্রপুরের বেজপুরা এলাকার ৫৬ বছর বয়সী তুলো দাস। শনিবার সকালে তিনি গ্রামের বাড়িতে হাজির হন। তাকে দেখে প্রথমে চমকে ওঠেন পরিজনেরা। এভাবে তুলো একা ফিরতে পারেন, তা ভাবতেই পারেন নি তারা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার পরিজনদের সঙ্গে কুম্ভে পৌঁছান তুলো দাস। মঙ্গলবার রাতে ভিড়ের চাপে পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জা শিবানী দাস, ভাসুর রামেশ্বর দাস। তুলোর খোঁজ না মেলায় সকলেই ট্রেনে রওনা হয়েছেন। তুলোর খোঁজে কুম্ভে রয়ে গিয়েছেন গিয়েছেন ভাসুর রামেশ্বর। তার খোঁজে বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়েছেন দুই আত্মীয়ও। তারপর এদিন তিনি ফেরায় কার্যত চমকে গিয়েছেন পরিজনেরা।বাড়ি ফিরে তুলো দাস জানান, ভিড়ে হুড়োহুড়িতে দলছুট হয়ে একসময় মনে হয়েছিল, আর বাড়ি ফিরতে পারব না। চারদিকে শুধু মানুষের মাথা। সঙ্গে মোবাইল ফোনও ছিল না। সামান্য কিছু টাকা ছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে পরদিন স্টেশনে পৌঁছাই। সেখানে কাটিহারের একদল ছিলেন। তারাই জানান, কাটিহার থেকে মালদহ কাছেই। ফলে কাটিহারগামী ট্রেনে ওদের সঙ্গে উঠে পড়ি। সেখান থেকে এদিন সকালে মালদাগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনে হরিশ্চন্দ্রপুরে নামি। তারপর আর সমস্যা হয় নি।