Advertisment

শতাব্দীপ্রাচীন মহিষাদলের রথযাত্রা, যার পিছনের ইতিহাসটা আজও জোর চর্চাবহুল!

ফি বার রথযাত্রার দিন কাতারে-কাতারে পুন্যার্থীর ঢল নামে মহিষাদলে।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
mahishadal rath yatra 2023

মহিষাদলের রথযাত্রা। ফাইল ছবি।

পুরী, মাহেশের পরেই মহিষাদলের প্রাচীন রথযাত্রার নাম আসে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই প্রন্তে প্রতি বছর রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। এবারও মহিষাদলের রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সচেষ্ট পুলিশ প্রশাসন। ভিড় এড়াতে পুলিশের উদ্যোগে "গাইড ম্যাপ" তৈরি করা হয়েছে।

Advertisment

আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এবারও মহিষাদলে লক্ষাধিক ভক্তদের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথা মেনে রথের রশিতে হাত ছোঁয়াতে কাতারে-কাতারে পুণ্যার্থী জড়ো হন মহিষাদলে। মহিষাদল রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য রাজবাড়ি থেকে পালকিতে চড়ে রাজা হরপ্রসাদ গর্গ আসেন রাজাবাহাদুরের রূপার বর্শাধারী দেহরক্ষী মাথার উপর রাজছত্র ধরে। পালকি থেকে নামার আগেই ডঙ্কা বাজিয়ে ঘোষণা করা হয় রাজার আগমন বার্তা। তিনিই রীতি-নীতি মেনে পালন করেন সূচনার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।

প্রথা মেনে তিনিই রথের রশিতে হাত ছোঁয়াবেন। তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হয় রথের যাত্রা। তারপরেই উপস্থিত পুন্যার্থীরা রথ টানা শুরু করেন। গড় গড় করে এগিয়ে চলে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথ। মহিষাদল শহীদ বেদি থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে গুন্ডিচাবাটি পৌঁছায় রথ। রথযাত্রা উপলক্ষে এখানে বসে বিশাল মেলা । এই মেলায় সব থেকে বেশি বিক্রি হয় কাঁঠাল। রাস্তার ধারে সারি দিয়ে কাঁঠাল, বেতের সামগ্রী, জিলিপি, পাঁপড় , তেলেভাজার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। ফি বার এখানে বসে প্রচুর সুগন্ধির দোকান । এরই পাশাপাশি এই মেলায় মাছ ধরার জাল ও বিভিন্ন সামগ্রীও বিক্রি হয়।

publive-image
সেজে উঠছে মহিষাদলের রথ। ছবি: কৌশিক দাস।

মেচেদা-হলদিয়া সড়ক পথে পড়ে মহিষাদল। হলদিয়া যাওয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড বা মেচেদা যাওয়ার পুরানো বাজার বাসস্ট্যান্ডে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই রথের মাঠ বা সড়ক। রথযাত্রার আগের দিন অর্থাৎ আজ সোমবার হয় "লেদ উৎসব "বা " নেত্র উৎসব"। এদিন বিশেষ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এই উৎসব হল রথের রশির বাঁধন প্রক্রিয়া। রথযাত্রার আগে রাজ পরিবারের সদস্য রথের রশি বেঁধে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন ।

আরও পড়ুন- খুন হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন নওশাদ! ISF বিধায়ককে জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা কেন্দ্রের

রথ টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারটি রশি থাকে। এর মধ্যে একটি রশি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সারা বছর এই রথ দেখভালের দায়িত্ব পালন করে এখানকার রাজ পরিবার। তবে বর্তমানে রথ উৎসবের দিনগুলিতে মেলা ও তার আনুসঙ্গিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমস্ত খরচ ও পরিচালনার দায়িত্ব বহন করে স্থানীয় মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। মহিষাদলের প্রাচীন রথয়াত্রায় ভিড় এড়াতে মহিষাদল থানার উদ্যোগে "গাইড ম্যাপ" তৈরি করা হয়েছে। সেই ম্যাপে পথ নির্দেশিকা থেকে কোথায় কোথায় রাস্তা বন্ধ, কোন পথ দিয়ে হাঁটবেন সেই সমস্ত যেমন রয়েছে তেমন স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন,স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে।

মহিষাদল থানার ওসি প্রলয় চন্দ্র জানান, মহিষাদলের প্রাচীন রথের মেলায় বহু মানুষের সমাগম ঘটে। তাঁদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে "গাইড ম্যাপ" তৈরি করা হয়েছে। ব্লক এলাকার বিভিন্ন জায়গায় "গাইড ম্যাপ" ডিসপ্লে করা হবে। "গাইড ম্যাপ"-এর পাশাপাশি এলাকা জুড়ে সিসিটিভি লাগানো থাকছে, ড্রোনের সাহায্যে নজদারি, পুলিশ হেল্প ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- মনোনয়নেই মৃত্যু-মিছিল! রক্তস্নান বাংলায়, হিংসা রুখতে উদ্যোগই সার? সুরাহা কি অসম্ভব?

গ্রামীণ মেলার কথা উঠলেই আজ বাঙালির চোখে যে ছবি ভেসে ওঠে তা হল রথের মেলা। যদিও গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে বহু দিন আগেই তা স্থান করে নিয়েছে শহরে –বাজারে। তাই রথ আর মেলা যেন সমার্থক বাঙালি জীবনে। আষাঢ়ের শুক্লা-দ্বিতীয়া তিথিতে বাংলার নানা প্রান্তের মানুষ এই মেলাকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন। রথযাত্রার ইতিহাস বেশ প্রাচীন হলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথের মেলা ২৪৭ বছরের পুরনো।

মহিষাদলের জমিদার বংশের রাজা আনন্দলালের স্ত্রী রানি জানকীর উৎসাহে ১৭৭৬ সালে রথযাত্রার শুরু হয়। সেই থেকে অনুষ্ঠিত রথের মেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সব থেকে বড় মেলা হিসেবে পরিচিত। আগে ১৫ দিনের মেলা হত বর্তমানে একমাসের মেলা। মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এক সময় মেলাকে কেন্দ্র করে আসর বসত পালাগান, কীর্তনের। মৃৎশিল্পের প্রদর্শনীও হত। কলকাতা থেকে আসত যাত্রাপালার দল। সময়ের সঙ্গে জৌলুস হারিয়েছে মেলার সংস্কৃতির আসর। মাসির বাড়িতে এখন ছোট করে আসর বসে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়েই। আছে সার্কাস, ম্যাজিকের জায়গায় মোটর সাইকেলের 'মরণঝাঁপ'।

এই মেলার এখনও প্রধান আকর্ষণ সবং-এর মাদুর। ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মাদুর পাওয়া যায় এই মেলায়। থাকে মাটির পুতুল, খেলনা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তৈরি ফুলদানি, নাইটল্যাম্প। এছাড়া গ্রামীণ জীবনের প্রয়োজন মেটানোর নানা উপকরণ। থাকে ফুল-ফল গাছের চারা। বিক্রি হয় প্রচুর ফল। মেলার অন্যতম আকর্ষণ নানাজাতের পাখির বাজার, বিশেষত পায়রা। দেশি পাখি কেনাবেচা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ঝুলিয়ে বিক্রি হয় রকমারি লাভ বার্ড ও বিদেশি পাখি।

এবছর রথ উৎসবের মধ্যে পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত নির্বাচন পড়েছে। এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মাতোয়ারা রাজনৈতিক মহল অন্যদিকে রথ উৎসব নিয়ে মাতোয়ারা সাধারণ মানুষ। মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী জানান, পূর্বের রীতি মেনেই মহিষাদলের প্রাচীন রথ উৎসব পালন করা হবে। পঞ্চায়েত ভোটের কারনে রথের জৌলুস যাতে কোনওভাবে কম না হয় সেদিকে আমাদের নজর থাকবে। মহিষাদল রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ জানান, প্রাচীন রীতিনীতি মেনে সোমবার থেকে "লেদ উৎসব "বা " নেত্র উৎসব"-এর মধ্য দিয়ে রথযাত্রার শুভ সূচনা হয়।

West Bengal Purba Medinipur Rath Yatra 2023 Mahishadal Rath Yatra
Advertisment